ঢাকা ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
অফিস ডেস্ক: অন্যায়ভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে ২০ হাজার শিশু-নারী-পুরুষ আত্মাহুতি দিতে পিছপা হব না।
বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মধুমতি মডেল টাউন হাউসিং সোসাইটির প্লট মালিক ও বাসিন্দাদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই কথা বলেন।
ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোশারফ হোসেন বলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে যে নতুন বাংলাদেশ-এর অভ্যুদয়, সেখানে মধুমতিবাসী যে চরম বৈষম্যের শিকার সেই করুণ কাহিনী, আড়ালে-আবডালে নয়,খোদ ঢাকা-আরিচা হাইওয়ের পাশেই ২০০১ সালে মধুমতি মডেল টাউন নামক আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠে। আবাসন এলাকাটিতে স্থানীয় জনসাধারণ ধান ও পাট চাষ করতেন। কেউবা জমির মাটি বিক্রি করে বেশী আয় করতেন। ফলে স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়। মধুমতির উদ্যোক্তা Metro Makers and Developers Limited সেই সময় বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রথম ও শেষ পাতায় বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া গুলোতেও সমভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। প্রকল্প এলাকার হাইওয়ের পাশেই স্থাপন করা হয় বিশাল বিশাল বিলবোর্ড, ব্যানার, প্রচার করা হয় লিফলেট। রাতারাতি নয় দীর্ঘ সময় নিয়ে Metro Makers জমি ভরাট করে আবাসনটি গড়ে তোলে। সে সময় কোন মিডিয়া, সরকারী বা বেসরকারি সংস্থা প্রকল্প স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করেনি। এছাড়া জমির সিএস, আর.এস, এস.এ খতিয়ানে দেখা গেছে যে, জমির প্রকৃতি হলো-নাল, জলাশয় নয়। এমনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে মধুমতিতে জমি ক্রয় করি। যথারীতি সরকারের সাব রেজিস্ট্রার নির্বিঘ্নে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। জমি রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে সরকার ১০০০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব পান। এসিল্যান্ড জমি খারিজ করেন ও ভূমি অফিস ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করেন। আমাদের প্রশ্ন এখানে প্লট ক্রয়কারী হিসাবে আমাদের অপরাধ কোথায়? অতঃপর ডেভেলপার কোম্পানি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নির্মাণ করেন ও বৈদ্যুতিক পোল বসান। পল্লি বিদ্যুৎ- বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন। বর্তমানে পল্লি বিদ্যুৎ এ আবাসন থেকে প্রতি মাসে ১৮-২০ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল আদায় করেন। অতীব দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, হঠাৎ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি (বেলা) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের অশুভ দৃষ্টি পড়ে মধুমতি মডেল টাউনের প্রতি। তিনি প্রকল্পটিকে বন্যা প্রবাহ এলাকা উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। মাননীয় হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে মধুমতি মডেল টাউনের মালিক মেট্রোমেকার্সকে রাজউকের অনুমোদন নিতে বলে। সেখানে বেলা ক্ষ্যান্ত না হয়ে আপিলেট ডিভিশনে আপীল করেন এবং সেখানে প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে বেলার পক্ষে একটি রায় করান। সেই রায়েও প্লট মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প এলাকায় মালিক কর্ত্রীপক্ষ মেট্রোমেকার্স যদি ৬ মাসের মধ্যে মাটি সরিয়ে না নেয় তাহলে রাজউক উক্ত মাটি সরিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়েছে এবং মেট্রোমেকারস থেকে মাটি সরানোর খরজ আদায় করতে বলেছে এবং সেখানে কোনধরনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। একই রায়ে প্লট মালিকদের রেজিস্ট্রেশন ব্যয়সহ জমাকৃত অর্থের দ্বিগুন টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। অথচ একযুগ অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি ক্ষতিপুরণের একটি টাকাও পরিশোধ না করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপদেষ্টা হয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে রাজউককে দিয়ে আমাদেরকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি মধুমতি মডেল টাউনের কাছে বিনামূল্যে ৮ টি প্লট চেয়েচিলেন কিন্তু বিনামূল্যে তিনি প্লট পাননি।তাই ব্যাক্তিগত আক্রোশে আমরা মনে করি এই মামলা তিনি দায়ের করেন। আমাদের একটাই দাবী এই বৈষম্য বিরোধী রায় পরিবর্তন করে আমাদের বসতভিটা রক্ষা করে আমাদের মাথাগোঁজার ঠাই রক্ষা করা হোক।
তিনি বলেন, মধুমতি মডেল টাউনের পূর্বপাশে ৫০০ বিঘা জমিতে বিদ্যুতের পাওয়ার প্লান্ট, পশ্চিমে বেসকারি মালিকানাধীন যমুনা ন্যাচারাল পার্ক (প্রায় ৫০ একর), প্রকল্পের সুম্মুখভাগে এক হাজার একর জমিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড় রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প তৈরির জন্য একটি চাইনিজ প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও মেট্রোরেলের ডিপো অবস্থিত। এছাড়াও আরও বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে এই এলাকায়। এ বিষয়ে বেলা বা অন্য কারও কোন অভিযোগ নেই। শুধু মধুমতি মডেল টাউনের দিকে তাদের যতো আক্রোশ ও প্রতিহিংসা। অথচ এই প্রকল্পের অনুমোদন এর জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৯টি ছাড়পত্রের মধ্যে ৮টি ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে এখানে। ৩ হাজারের বেশি ছোট বড় স্থাপনা রয়েছে। যখন রায় দিয়েছে তখনকার পরিস্থিতি এবং ববর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। প্রকল্পে ১০ লাখের বেশি গাছ রয়েছে। একটি গাছ কাটলে বেলা আন্দোলন করে অথচ এই প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১০ লাখের বেশি গাছ কাটা যাবে। এটা কি পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে না? লক্ষাধিক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা কি মানবাধিকার লংঘন নয়? অন্যান্য স্থাপনা রেখে কেবল মাত্র মধুমতি উচ্ছেদ চরম বৈষম্যের উদাহারণ নয় কি? ১০ লাখ এর বেশী গাছ ধ্বংস করা কি ধরনের পরিবেশ রক্ষা?
তিনি আরো বলেন, আশিয়ান সিটি, পূর্বাচল,জলসিড়ি, বসুন্ধরা, ঝিলমিল, আফতাব নগর, বনস্ত্রী, ঢাকা ও চন্দ্রিমা উদ্যান, বসিলা সিটি সবই নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে উঠেছে। তাই আমরা মনে করি বেলা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কোন মহলের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বিচার ব্যবস্থার দ্বারা আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। আমরা এর প্রতিকার চাই। উল্লেখ্য যে ইতোমধ্যে মেট্রো মেকারস রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে ১১/১২/২০২৪ ইং তারিখ এ একটি আবেদন করেছে। মাননীয় চেম্বার জজ জনাব রেজাউল হক ২৩/০১/২০২৫ ইং তারিখ ফুল কোর্টে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী কালিন সরকার লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য, তাদের অধিকার, মাথা গোঁজার ঠাইটুকু কেড়ে না নিয়ে মধুমতি মডেল টাউনে আমাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন। বিনয় এবং দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে, অন্যায়ভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে ৫০ হাজার শিশু ও নারী,পুরুষ আত্মাহুতি দিতে পিছপা হব না।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোশারফ হোসেন, উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি শাহনেওয়াজ, সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল সাত্তার সহ মধুমতি মডেল টাউন হাউসিং সোসাইটির সদস্যসহ নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ সিভিল রাইটস সোসাইটি র পরিচালক মোঃ লোকমান হোসেন।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST