ই-সিগারেটসহ সব ধরনের তামাক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ জরুরী

প্রকাশিত: ১:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২০

ই-সিগারেটসহ সব ধরনের তামাক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ জরুরী

বিশেষ প্রতিনিধি॥ তরুণ প্রজন্মকে তামাকজাত পণ্য থেকে দূরে রাখতে ই-সিগারেটসহ সব ধরনের ভ্যাপিং এবং হিটেড তামাক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশেও বিক্রি নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের হার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। কোনো দেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে রাখতে এবং তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরী। এখন পর্যন্ত ২৪টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনও নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কড়া হুশিয়ারিসহ বন্ধের সর্বাত্মক নির্দেশ থাকলেও বন্ধ হচ্ছেনা তামাকজাত পণ্যের বিক্রি, প্রদর্শন ও বিতরণ। দেখা গেছে, তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বিভিন্ন উপায় বিভিন্ন মাধ্যমে তামাক ও সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে। দেশে শাস্তিমূলক আইনের উল্লেখ আছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫নং ধারার ১নং উপধারায় বলা আছে ‘কোনো ব্যক্তি প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না এবং ৫নং ধারার ৪নং উপধারায় বলা আছে ‘কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। এখন দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে প্রথমেই তামাক কোম্পানীকে দেয়া সমুদয় সুবিধা বন্ধ বা সীমিত করতে হবে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ বিএটিবি তাদের উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে ‘শ্রম আইন ২০০৬’ এর কয়েকটি বিধান থেকে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। এর মধ্যে তুলনামুলকভাবে কম পারিশ্রমিক প্রদান ও অতিরিক্ত সময় কাজ করানো উরেøখযোগ্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোম্পানিকে তামাকজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান থেকে অব্যাহতি ও প্রদান করেছে। তাছাড়া, তামাক কোম্পানির সাথে সরকারী কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ, তামাক কোম্পানিগুলোকে পুরস্কার এবং পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তামাক কোম্পানিকে তাদের ব্যবসা প্রসারে প্রলুব্ধ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি বছর তামাক সেবন করার কারনে ১০ লক্ষেরও বেশী লোক মারা যায়। তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতায় দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যারা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায় তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ, যারা ব্রংকাইটিস রোগে মারা যায় তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এবং যারা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এ মারা যায় তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ লোক তামাক সেবী। ই-সিগারেটসহ ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা ৩০ কোটি মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে রেখেছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতে ২২ কোটি, বাংলাদেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ এবং মিয়ানমারে ১ কোটি ১০ লাখ লোক ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে। ইসিগারেটসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার নিষিদ্ধে প্রথমেই প্রয়োজন জনসচেতনতা,তামাক দ্রব্যে উৎপাদন, বাজারজাতকরন ও বিক্রির উপর আইনী প্রয়োগ। একই সাথে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ ও সংশোধনী ২০১৩ সালের আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরী।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest