সমাজের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২০

সমাজের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে

মোঃ হাসিম উদ্দিন আঞ্চলিক প্রতিনিধিঃ গণমাধ্যমে হচ্ছে জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছানোর আধুনিকতম পদ্ধতি। একটি জনগোষ্ঠীর জীবন ধারা কোন দিকে ধাবিত হবে মানুষ কি চিন্তা করবে, কি খাবে, কি পড়বে সেটিও বর্তমান যুগে গণমাধ্যমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। তাই জাতির উন্নয়নে সাংবাদিকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এ অবস্থানের কারণে তারা যেমন জাতির কাছে দায়বদ্ধ, তেমনি নিজের বিবেক এবং স্রষ্টার নিকট দায়বদ্ধ। সত্যনিষ্ঠ সংবাদকর্মীদের দ্বারা সঠিক পথে চালিত হয়ে জাতি উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে পারে, আবার হলুদ সাংবাদিকদের দ্বারা ভুল পথে চালিত হয়ে জাতি নিদারুণ পতনেরও শিকার হতে পারে। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে মানুষের সামনে ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড উপস্থাপন করেন। অতীতে মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপনে দেশপ্রেমিক সাংবাদিকরা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। সে যুগের সাংবাদিকরা ছিলেন ন্যায়ের পথে অটল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে পরোয়া করতেন না, উল্টো শাসকগোষ্ঠীই তাদের কলমকে ভয় পেত। আদর্শবাদী সাংবাদিকরা জীবন গেলেও কলম বিক্রি করতেন না। তারা ছেঁড়া স্যান্ডেল, সস্তা পোশাক পরলে ও সমাজে তাদের মর্যাদার কমতি ছিল না। তারা সুখী-সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষ্যে সংগ্রাম করতেন লেখনীর মাধ্যমে। যারা মিডিয়াতে কাজ করতে আসছেন তাদের অধিকাংশই আসছেন সাংবাদিকতা পেশার সুবিধা হাসিল করে অর্থ ও ক্ষমতা অর্জনের জন্য। তাদের স্বার্থপরায়ণতা ও পক্ষপাতিত্বসুলভ মনোবৃত্তির দরুন তাদের পরিবেশিত সংবাদে বিশ্বাসযোগ্যতাও হারিয়ে যাচ্ছে। স্বার্থান্ধতা আর সততা একত্রে চলতে পারে না। তাই সত্যের পক্ষে লড়াই করার শক্তি বা অভিরুচি আজ তাদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায়না। তাদের অধিকাংশ চিন্তা ও কর্ম শক্তি ব্যয়িত মানুষের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ আর অর্থের চিন্তায়। মিথ্যা পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশন, ব্ল্যাকমেইল, উদ্দেশ্যমূলক সম্মানহানি করা ইত্যাদি অপকর্ম সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ। সুতরাং এখন সময় এসেছে গণমাধ্যমে প্রচলিত ধারার বাহিরে ন্যায়-নীতি ও কল্যাণভিত্তিক একটি ধারার প্রবর্তন করার। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, যেই সমাজে আমরা বড় হয়েছি সেই সমাজের মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। বস্তুবাদী শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের আত্মিক গুণাবলী দিনদিন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে অপরাধমনষ্কতা। এ থেকে মানব জাতিকে উদ্ধার করার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরকেই সবার আগে আজ গণমাধ্যমকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে । তাদের মাধ্যমেই সমাজ ও জাতি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টে বলা আছে- কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রতিবেদকের উচিত ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সাধ্যমত নিশ্চিত হওয়া এবং অবশ্যই খবরের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করার মতো যথেষ্ট তথ্য জোগাড় করা। প্রচলিত আইন, শাস্ত্রীয় আইন, বিবেকের আইন কোন আইনে মিথ্যা লেখার অনুমতি দেয়না, তথাপি আজকের গণমাধ্যম জগৎ মিথ্যা দ্বারা দূষিত। কে কাকে কিভাবে নাস্তানাবুদ করতে পারে, অপদস্ত করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। তাই এখনো সময় আছে এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার। যদি আমরা না ফিরি, তাহলে সমাজ আরো অস্থিতিশীল হবে এবং পৃথিবী মানুষের মনুষ্যত্ব সর্বোপরি বাসযোগ্য থাকবে না। আমাদেরকে এমন ধারার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে কেউ কারো নিন্দা করবে না, যা বলবে সত্য বলবে। যারা গণমাধ্যমে কাজ করবেন তারা শুধু স্ব স্ব অবস্থান থেকে অর্পিত দায়িত্ব মানবতার কল্যাণে লেখনীর মাধ্যমে পালন করবেন, সত্য এবং প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরবেন ।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest