নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য বিভাগের তিন যোদ্ধা করোনা আক্রান্ত

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২০

নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য বিভাগের তিন যোদ্ধা করোনা আক্রান্ত
তানভীর আহমেদ কুমিল্লা
নাঙ্গলকোটে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রথম সারির চার করোনা যোদ্ধার মধ্যে তিন করোনা যোদ্ধা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা করোনা সন্দেহে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও দাফনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ গত ২৭ মে আক্রান্ত হন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) হাবিবুর রহমান ও স্যানেটারি ইন্সপেক্টর এবায়দুল হক। ২৩ মে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মাসুদ হাছান আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে অন্য একজন করোনা যোদ্ধা মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মহি উদ্দিন এখনো অসুস্থ অবস্থায় নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তার করোনা নেগেটিভ শনাক্ত হয়। হাসপাতাল লকডাউন করায় আক্রান্তদের মধ্যে হাবিবুর রহমান ও এবায়দুল হক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনে সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্য একজন মাসুদ হাছান হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য সবচাইতে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গত ২৩ মে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন স্বাস্থ্য বিভাগের ৮জন ডাক্তার, ১জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ৩জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, রায়কোট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ১জন স্যাকমো, ১জন এমএলএসএসসহ ১৪ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়া একটি বেসরকারি হাসপাতালের ৩জনসহ মোট ২৫জন করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আক্রান্তের কথা বলা হলেও আমরা খোঁজ নিয়ে শুধুমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) মাসুদ হাছানের আক্রান্তের খবরটি জানতে পারি। এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফেসবুক পেইজে প্রথমে ২৫ জন আক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হলেও গণনা করে ২৪ জনের হিসাব দেখা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ জন আক্রান্ত হওয়ার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জোড্ডা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও নাঙ্গলকোট আধুনিক মেডিকেল সার্ভিসেসসহ আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করা হয়। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি গত ২৭ মে পর্যন্ত বেসরকারি ৩টি হাসপাতাল লক ডাউন করা হয়। প্রথম সারির চারজন করোনা যোদ্ধা হাবিবুর রহমান, মহি উদ্দিন, মাসুদ হাছান ও এবায়দুল হকসহ তাদের টিম এ পর্যন্ত প্রায় ৫শ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন। এছাড়া করোনা উপসর্গ সন্দেহে মৃত চার জনের দাফন সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে মৃত একজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনজন কোন না কোনভাবে করোনায় আক্রান্ত হন। গত এক মাসে তারা সবচাইতে বেশি নুমনা সংগ্রহ করেন। দিন-রাত তাদেরকে অমানবিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কখনো রাত ১টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ল্যাবে পাঠানো পর্যন্ত সার্বিক কাজ তাদেরকে করতে হয়েছে। তারা গত প্রায় দেড় মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহে নিয়মিত ব্যস্ত সময় কাটান। করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ এবং দাফন করতে গিয়ে আজ তারা নিজেই করোনায় আক্রান্ত ! দিন-রাত পরিশ্রম করতে গিয়ে হাবিবুর রহমান শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকলেও তাদের খুব বেশি সমস্যা নেই বলে জানা যায়। তারা সুস্থ আছেন। এলাকাবাসীর নিকট তারা দোয়া চেয়েছেন। সবচাইতে অমানবিক বিষয় হচ্ছে-করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা অসুস্থ হলেও তাদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লক ডাউন থাকায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হাবিবুর রহমান ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এবায়দুল হককে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনে হোম আইসোলেশনে থেকে নিজেদের উদ্যোগে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মাসুদ হাছান উপজেলার মৌকারা ইউনিয়নের গোমকোট গ্রামের বাড়িতে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হাবিবুর রহমান ও মাসুদ হাছান প্রাণবন্ত ও আন্তরিক মানুষ। নমুনা সংগ্রহে তাদের আন্তরিকতার অভাব ছিল না। যখনই নুমনা সংগ্রহে তাদের ডাক পড়েছে তাৎক্ষনিক পিপিই পড়ে ছুটে গেছেন। যারা দিন-রাত নমুনা সংগ্রহে ছুটাছুটি করেছেন। আজ তারা নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসায় ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এই মানবতার ফেরিওয়ালাদের জন্য আমাদের অনেক দোয়া থাকবে। তারা সুস্থ হয়ে তাদের মানবিক সেবায় আবার ফিরে আসবেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাসুদ হাছান মানবতার সেবায় ঢাকা মাহাখালীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আই এইচ টি) প্রেষণে বিএসসি (ল্যাব) কোর্সে অধ্যয়ন অসমাপ্ত রেখে সাময়িকভাবে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে হাসপাতালে ফিরে আসেন। হাসপাতালে যোগ দেয়ার পর থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজে লেগে যান। নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, বেসরকারি নিউ এ্যাপোলো মেডিকেল সার্ভিসের মার্কেটিং কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ শনাক্ত এনায়েত উল্লাহর মাধ্যমে হাসপাতালের ১৪জনসহ মোট ১৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এনায়েত উল্লাহর সাথে কথা বললে সে জানায়, ঢালুয়া থেকে আমার কর্মস্থল নাঙ্গলকোটের বেসরকারি নিউ এ্যাপোলো মেডিকেল সার্ভিসে নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। বিভিন্ন সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও যাতায়াত করেছি। এছাড়া অন্য কোথায়ও আমি যাই নাই। আমি কিভাবে আক্রান্ত হলাম নিজেই বুঝতে পারছি না। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৪জনসহ মোট ১৮জন আমার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে এটা আমি কোনভাবে স্বীকার করছি না। আমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকে লেখালেখির কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। বর্তমানে আমি হোম আইসোলেশনে সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া ঔষধ নিয়মিত সেবন করছি। আশা করছি আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবো। জানা যায়, আমাদের পার্শ্ববর্তী লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য করোনা ওয়ার্ডে আইসোলেশনের ব্যবস্থা থাকলেও নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থা না করে গোহারুয়ায় প

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest