নোয়াখালীর মাইজদী এখন ময়লা-আর্বজনার শহরে পরিণত, জনদুর্ভোগ চরমে!

প্রকাশিত: ১১:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০

নোয়াখালীর মাইজদী এখন ময়লা-আর্বজনার শহরে পরিণত, জনদুর্ভোগ চরমে!

ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ রিপন, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ নোয়াখালী পৌরসভার মাইজদী শহর ময়লা-আর্বজনার শহরে পরিণত হয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে ময়লা-আর্বজনা নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়াও যত্রতত্রে পড়ে আছে। প্রতিদিনই প্রয়োজনীয় কাজে শহরের যে রাস্তায় পা রাখবেন সেখানেই দেখতে পাবেন ময়লা-আর্বজনার বড় বড় স্তুপ। যেমন সড়কের পাশে, হাসপাতালের সামনে, হাট-বাজার, অফিস আদালতের সামনে দিনের পর দিন পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনার পঁচা দুগর্ন্ধে চারপাশের পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ পঁচা ও দুগর্ন্ধযুক্ত ময়লা-আর্বজনা থেকে বাদ পড়েনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়টিও। আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসের সামনে একটু উত্তর পাশে সেখানেও আজ এক সাপ্তাহ ধরে এ ময়লা-আর্বজনার স্তুপ পড়ে আছে। মাইজদীতে বসবাসরত সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে এখন সব চেয়ে নোংরা, দুগর্ন্ধ জনিত ও দূষিত এলাকা হচ্ছে জেলা শহর মাইজদী। সাধারণ জনগনের দুর্ভোগ যেন আরো চরমে।

এ নিয়ে জনদুর্ভোগের জন্য নোয়াখালী পৌরসভার বর্তমান মেয়র শহিদ উল্ল্যাহ খান সোহেলের প্রশাসনিক দুর্বলতা, কাজে অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কথাগুলো সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে আজ ২৩ শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে, হাসপাতালের সামনে, হাট-বাজারের সম্মুখে, অফিস আদালতের সামনে দিনের পর দিন পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা অপসারণ করা হচ্ছে না। এদিকে যততত্রে ময়লা-আর্বজনা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় এসবের পঁচা দুগর্ন্ধে পুরো শহরের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। এতে একদিকে মশা, মাছি ও ক্ষতিকারক ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণুর উপদ্রব বাড়ছে, অন্যদিকে সারা শহরই যেন আর্বজনার বাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া কোমলমতী শিক্ষার্থীরা, হাসপাতালে আগত রোগী, আদালতে বিচারপ্রার্থীরা, দর্শনার্থী, পথচারী, দিনমুজুর ও হাট বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা। এব্যাপারে নোয়াখালী পৌরসভার পরিচ্ছনতা কর্মীরা জানান, পৌর এলাকার আইয়ুবপুরে দীর্ঘদিন থেকে শহরের ময়লা-আর্বজনা নিয়ে রাখা হয়ে আসছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁধার কারণে আর্বজনার গাড়ি সেখানে যাচ্ছে না। এর আগে ময়লাবাহী গাড়ির চালকের উপর স্থানীয় লোকজন হামলা চালিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করে। অপরদিকে আইয়ুবপুরের স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, নোয়াখালী পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা যেখানে রাখে সে সড়কটি ব্যস্ততম সড়ক। এ সড়কের পাশে দীর্ঘদিন যাবৎ ময়লা-আর্বজনা ফেলে রাখার কারণে এলাকার মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হয়ে উঠেছে। যার কারণে লোকজন বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে আমাদের সংসদ সদস্যকে জানালে তিনি আমাদেরকে পৌরসভার মেয়রকে বিয়ষটি জানাতে বলেন। এ বিষয়ে মেয়রের সাথে কথা বললে তিনি কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়েই বছরের পর বছর আমাদেরকে শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে আমরা বাধ্য হয়ে পৌরসভার ময়লাবাহী গাড়ি এলাকায় ডুকতে দিচ্ছি না। এব্যাপারে নোয়াখালী পৌরসভার প্রধান মেডিকেল অফিসার প্রনয় কুমার দেবনাথ জানান, এভাবে যেখানে সেখানে ময়লা-আর্বজনা পড়ে থাকার ফলে পুরো এলাকায় বায়ু বাহিত রোগগুলো বেড়ে যাবে। যেমন, শ্বাসকষ্ট বাড়বে, ডায়রিয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে হাসপাতালে বর্জ্য পড়ে থাকার কারণে এমন কিছু রোগ দেখা দিতে পারে যার বিরুদ্ধে কোন এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান না হলে পৌরসভা বাসী বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্ল্যাহ খান সোহেল জানান, গত দেড় যুগ ধরে পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা আইয়ুবপুর এলাকায় ডাম্পিং করা হয়।কিন্তু কিছুদিন আগে সেখানে ময়লাবাহী গাড়ি গেলে স্থানীয়রা এমপির কথা বলে বাঁধা দেয় এবং পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদেরকে মারধর করে। যার কারণে সব প্রস্তুতি থাকা সত্তে ও পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা অপসারণ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে পৌর মেয়রের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী জানান, আমি চিকিৎসার জন্য কিছুদিন দেশের বাহিরে ছিলাম। দেশে আসার পর জানতে পারলাম যেখানে ময়লা ফেলা হতো ঐ এলাকার লোকজন ময়লা ডাম্পিং করতে বাঁধা দেয়। তারা আমার কাছে আসলে তাদেরকে আমি বিষয়টি পৌর মেয়রের সাথে কথা বলতে বলি। কারণ এ সমস্যাটি পৌর মেয়রের দায়িত্বে অবহেলার কারনে হচ্ছে। তারপরও আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে বলবো তারা যেন মেয়রকে আরো দু-তিন মাস সময় দেয়। মেয়রকে বলবো তিনি যেন স্থানীয় লোকজনের সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করে নেন। এদিকে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আশ্বাস নয়, আমরা কাজে আশাবাদী বলে তারা জানান। তারা পৌর মেয়রের কাছ থেকে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চান।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest