এসএম স্বপন, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার স্বল্প পরিসরে, স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ মেনেই দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সরকার ঘোষিত সেই নির্দেশনা না মেনেই শার্শা উপজেলার বেনাপোল, নাভারন, শার্শা ও বাগআঁচড়ায় পুরোদমে চলছে ঈদের কেনাকাটা। অধিকাংশ জায়গায় কোন নিয়মই মানা হচ্ছে না। বরং পরস্পর থেকে দূরত্ব বজায় না রেখেই চলছে কেনাকাটা। আবার সেই সাথে যুক্ত হয়েছে মাস্ক না পরে কেনাকাটা করতে আসা। বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব যেন তাদের স্পর্শ করতেই পারেনি। সীমিত সময়ে কেনাকাটার সুযোগে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই কোথাও। বরং দেড় মাস পর সড়ক থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমলে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। উপজেলার সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট খুলে দেওয়ার পর পরই দিক-বিদিক ছুটে চলা মানুষের সমাগম আর হালকা যানবাহনে পুরনো চেহারা ফিরে পেয়েছে শার্শা। করোনা ঝুঁকি আমলেই নিচ্ছেন না এখানকার মানুষ। করোনার প্রভাবে দীর্ঘ দিন ফাঁকা থাকা রাস্তাগুলো ফিরে পায় প্রাণ। সড়কের মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে যানজট। বন্ধ দোকানপাট ও মার্কেটগুলো খুলে যাওয়াতে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। আর শপিংমলের সামনে জীবাণুনাশক টানেল বুথ বসানোর কথা থাকলেও সেটা হয়নি। পরিবার থেকে শিশুদের নিয়ে বাজারে আসতে নিষেধ করা হলেও তা মানছেন না ক্রেতারা। একের অধিক লোকজন এক সাথে হুমড়ি খেয়ে মার্কেটগুলোতে প্রবেশ করছেন। তবে, বরাবরের মতো এবার ঈদের কেনাকাটায়ও পুরুষের তুলনায়, ঈদ মার্কেটে নারীদের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেনাপোল লালমিয়া সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা রহিমা বেগম বলেন, একেই করোনার কারণে ঘরবন্দী। ঘর থেকে বের হতেই পারছি না। দোকানপাট যখন খুলেছে, আগে ভাগে কেনাকাটা টা করেই রাখি। বেনাপোল ইউনিয়নের দিঘিরপাড়ের কলেজছাত্রী আফিয়া সুলতানা বলেন, “সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তো দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু যখন পোশাক দেখছি তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে গায়ের ওপর। আমি তখন যাব কোথায়?” উপজেলার রাজার ডুমুরিয়া গ্রামের শেফালি আক্তার বলেন, “শুনছি আবার মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো করে আইছি। মাস্ক আনতি মনে নেই। এক দিনে আর কী হবে?” শিশুছেলে ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নাভারন নিউমার্কেটের দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন এক নারী। নিজেকে আয়শা আক্তার নামে পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, তিনি একজন গৃহবধূ। ১৫ কিলোমিটার দূরের পুটখালি গ্রাম থেকে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। “ইচ্ছে করেই বাচ্চাদের সঙ্গে করে এনেছি, তাদের পছন্দের পোশাক কেনার জন্য। প্রতিবছর রোজার শুরুতেই কেনাকাটা করে ফেলি। এ বছর সব ধরনের কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে।” বাগআঁচড়ার বাজারের রহমান মার্কেটের বাংলা বাজার দোকানের প্রোপাইটার জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই তিনি দোকানদারি করছেন। তবে, করোনার প্রভাবে অন্যান্য ঈদের থেকে এবার লোক সমাগম অনেক কম। বেচাকেনাও হচ্ছে তুলনামূলক অনেক কম। করোনার প্রভাব কমে গেলে বিক্রি বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। বেনাপোল বাজারের নুর শপিং কমপ্লেক্সের ফ্যাশন মিউজিয়ামের মালিক মুসা করিম বলেন, “ঈদ বাজার দুই দিনেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। ভিড় এড়াতে মার্কেটে আসা মানুষকে দূরে দূরে থাকতে বলছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি। চেষ্টা করছি সরকারি নির্দেশনা মেনে বেচাকেনা করার। বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেট, নূর শপিং কমপ্লেক্স, রহমান চেম্বার, শাহজাহান মার্কেট, ডাব্লু মার্কেট, হাজি মোহাম্মদ উল্লাহ মার্কেট, হাইস্কুল মার্কেট, হিরা সুপার মার্কেট, নাভারনের নিউ মার্কেট, তালেব প্লাজা, সোনালী মার্কেট, বাগআঁচড়ার নিউ মার্কেট, আঁখি টাওয়ার, সুফিয়া প্লাজা, রহমান মার্কেট, বাবু মার্কেটসহ বেশির ভাগ মার্কেটে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেই চলছে ঈদের কেনাকাটা। এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের নির্দেশনা মেনে চলতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে জানিয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমলসমূহ সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। “আমরা যতক্ষন থাকছি, ততক্ষন সবাই আইন মানছে। চলে আসলেই যা তাই। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান তিনি।”