শীত এলেই ঘরে সুখ আসে পিঠা বিক্রেতা কুড়িগ্রামের মমেনার l

প্রকাশিত: ২:২৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২১

শীত এলেই ঘরে সুখ আসে পিঠা বিক্রেতা কুড়িগ্রামের মমেনার l

সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।। শীতের আগমনি বার্তা মমেনা বেওয়ায় ক্লান্ত শরীরে যেন একটু সুখের অনুভূতি নিয়ে আসে। বছরের ৬ মাস বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করেন তিনি। নভেম্বর মাস এলেই সব কাজ ফেলে নেমে পরেন পীঠা তৈরির কাজে। এই ৪ মাস পিঠা তৈরি করে ১ ছেলে আর ২ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কুড়িগ্রাম শহরের কেন্দ্রীয় বাস্টস্টান্ড সংলগ্ন সিএন্ডবি মোড় এলাকায় প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পিঠা তৈরি করেন মমেনা বেওয়া। একাই দোকান সামলান তিনি। কারণ ছেলেমেয়েরা এখন দূরে থাকে। তাদের সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ নেই তার।

মমেনা বেওয়া জানান, একমাত্র ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় চলে গেছে। সেখানে রাজ মিস্ত্রীর কাজ করে সে। মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এই ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা বিক্রি করে টাকা জমিয়ে এক মেয়েকে সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও অপর মেয়েকে যাত্রাপুরে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে শহরের পৌরসভা এলাকার বাণিয়াপাড় গ্রামে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

তিনি ব্যবসার বিষয়ে বলেন, প্রতিদিন ৭০টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আতপ চাল কিনে বাড়িতে নিজেই আটা বানিয়ে নেন। এরপর ভাপা পিঠা ১০ টাকা এবং চিতই পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি করেন। এতে দিন শেষে কখনো ৪শ কখনো বা ৫শ টাকা আয় হয় তার। সেই কষ্টের টাকা জমিয়ে তিনি ভবিষ্যতের জন্য রাখছেন।

মমেনা বেওয়া অভিযোগ করেন, চালসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন লাভ কম হচ্ছে।

মমেনা বেওয়ার মত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রিকশা প্যাডলার মাহিন আলম শীত এলেই মহাজনের কাছে রিকশা জমা দিয়ে ৪মাস পিঠা তৈরির কাজ করেন। প্রতিদিন মাহিন আলমের আয় হয় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। অপরদিকে সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলমও শীতকালে পেশা পরিবর্তন করেন।

শহরের সবচেয়ে বড় পিঠা তৈরির দোকান রয়েছে ঘোষপাড়াস্থ ইসলামী ব্যাংক এলাকায়। এখানে কয়েক ভাই মিলে ৭টি চুলায় শীতের বিভিন্ন খাবার তৈরি করছেন। এরমধ্যে ৩টি চুলায় চিতই পিঠা, ২টি চুলায় ভাপা পিঠা, ১টি চুলায় তেল পিঠা এবং অপর একটি চুলায় সেদ্ধ ডিম তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও তারা বাড়ি থেকে তৈরি করে আনেন সরিষাবাটা, ধনেপাতা ও শুটকী ভর্তা। এখানকার মানুষের জন্য এটি ভীষণ জনপ্রিয় খাবার। এখানে বিকাল ৩টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত বিকিবাট্টা হয়।

ইতোমধ্যে শীতের আগমনি বার্তায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভীর বেড়েছে পিঠা প্রেমীদের। বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবার পরিজন নিয়ে আসছেন তারা। শীতকাল যেন বাঙালীর মনে প্রাণে জাগিয়ে তোলে মৌ-মৌ পীঠার প্রাণকাড়া সুগন্ধ। ভর সন্ধ্যায় উনুনের চারপাশে গভীর আগ্রহে গড়ম পিঠার স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে সবাই। যারা সময় পান না তারা ছুটে যান দোকানগুলোতে নিজেদের আস্বাদ মেটাতে।

ঘোষপাড়ায় পিঠা খেতে আসা শহরের হাটিরপাড় এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের জানান, ইট-পাথরের শহরে পিঠা বানানো সহজ না হওয়ায় এখান থেকে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই।

শিক্ষিকা শামসুন নাহার জানান, ব্যস্ততার কারণে বাসায় পিঠা তৈরি করা হয় না। ফলে দোকান থেকে কিনে বাচ্চাদের পিঠা খাওয়ান।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, শীত এলেই শহরের পরিবারগুলোতে বৈকালিক নাস্তার স্থান দখল করে নিয়েছে শীতের বিভিন্ন পিঠা। অনেকে খোলা জায়গায় পিঠা তৈরি করছেন, এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, খোলা জায়গায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে যাতে পিঠা তৈরি করা না হয় সে ব্যাপারে বিক্রেতাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest