খুলনায় গরুর মাংস ৭০০ টাকা!

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২২

গোলাম মোস্তফা খান,খুলনা।

ঈদকে কেন্দ্র করে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে গরুর মাংসের দাম। খুলনায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে এখন ৭০০ টাকায়। কেসিসির দর নির্ধারণকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাংসের দাম বাড়িয়ে চলেছে বিক্রেতারা। গত একমাসে এ নিয়ে এর দাম বাড়ল দু’বার।
গেল বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে স্থানীয় বিক্রেতারা গরুর মাংসের দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি করে। এর কিছুদিন পরে ৬০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে পশু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা ৬২০ টাকায় বিক্রি করে। এরপর রমজান মাসে কেসিসি এর দাম নির্ধারণ করে দেয় ৬০০ টাকায়। তবে কেসিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে রোববার (১ মে) থেকে খুলনার ব্যবসায়ীরা ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে চলেছেন।
খুলনার কসাই মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো: আবু বক্কার সরদার বলেন, খুলনা জেলার হাটগুলোতে গরু সরবরাহ কমে গেছে। গত ১০ বছরেরও বেশী সময় ধরে প্রতিবেশী দেশ থেকে পশু আসছেনা। খামারী গুলো আগামী ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে সংরক্ষণ করে রাখছে। হাটগুলোতে দালালদের প্রভাব রয়েছে। তাদের কারণে পশুর দাম করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এ মাসের শুরুতে কেসিসি মাংসের দর নির্ধারণ করে দেওয়ায় খুলনার অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে অন্য ব্যবসা করছেন।
ময়লাপোতা মোড়ের ব্যবসায়ী রাজু বলেন, পশু আনতে ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। সবমিলিয়ে একটি গরু আনতে তাদের ১২০০ টাকা খরচ হয়। তাছাড়া গো খাদ্যের দাম বেড়েছে। কোরবানিকে সামনে রেখে মালিকরা গরু হাটে আনতে চায়না। সেখানে পশুর সংখ্যা থেকে ব্যবসায়ীর উপস্থিতি বেশী হওয়ার গরুর দাম বেড়ে যায়। পশুর সংকট দেখা দিয়েছে। দাম কমলে মাংসের দাম কমানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আযম খান কমার্স কলেজ মোড়ের ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, রোববার থেকে মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কসাই সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ পণ্যটির দাম ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী খুলনার হাটগুলোতে হানা দিয়েছে। তাদের কারণে মূলত গরুর দাম বেড়েছে। মাংসের দাম কমানোর কথা জানতে চাইল তিনি বলেন, সরকারী উদ্দ্যেগে ফার্মের ব্যবস্থা করতে হবে। গো খাদ্যের দাম কমাতে হবে। পশুর সংকট থাকলে বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে। না হলে এ ব্যবসায় ভাটা পড়বে।
মাংসের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলেন, এ মাসের শুরুতে কেসিসি মাংসের দাম ৬০০ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়। রমজান মাস জুড়ে তা থাকার কথা। ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশী দাম নেওয়ায় গত ৭ দিন পূর্বে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের কয়েকটি মাংসের দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানে একজন ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাংসের দাম বেড়েছে তা তিনি অবগত নন। এর দাম কেসিসি নির্ধারণ করবেন বলে তিনি জানান।
মাংসের দাম বৃদ্ধির খরব জেনে অনেকে বেশী পরিমাণ মাংস ক্রয় করছেন। আযম খান কমার্স কলেজের সামনে কথা হয় ব্যবসায়ী আজিজুলের সাথে। তিনি দাম বৃদ্ধি খবর জেনে ১০ কেজি মাংস ক্রয় করেছেন। জানতে চাইলে তিনি জানান, একদিন বাদে ঈদ। এর আগে যদি দাম বেড়ে যায় তাই বেশী নেওয়া।গল্লামারির একজন ক্রেতা জানান এবাজারে অধিক মুল্য নিবে আবার ভেজাল এমনকি পচা মাংস বিক্রির অভিযোগ অনেক দিনের এখানে সত্তর অভিযান চালানো উচিৎ।
ময়লাপোতা মোড়ে ক্রেতা শাহীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ভোক্তা অধিকার ও এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে একের পর এক নিত্য প্রয়োজনী পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। অনেকেই ঈদে একটু ভালমন্দ খাওয়ার চেষ্টা করে। মধ্যবিত্ত যাদের টাকা নেই তাদের কি উপায় হবে? টাকা ধার করে মাংস কিনতে এখানে আসা তার। এর দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।
উল্লেখ্য ১ এপ্রিল পবিত্র মাহে রমজান মাস উপলক্ষে খুলনা মহানগরীতে মাংস ও মুরগীর দাম স্থিতিশীল রাখতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্দ্যেগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। সেখানে মহানগরীতে গরুর মাংসের মূল্য প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা এবং খাসির মাংসের মূল্য সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest