বদলগাছী অবৈধ ইট ভাটার মালিক পক্ষ ” বাংলাদেশ শ্রম আইন” কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শিশু শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।

প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২২

বদলগাছী অবৈধ ইট ভাটার মালিক পক্ষ ” বাংলাদেশ শ্রম আইন” কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শিশু শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।

সাগর হোসাইন, বদলগাঁছী, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটায় শিশু শ্রমিকের কদর বেড়েই চলেছে। প্রসাশন নিরব ভূমিকা পালন করতেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ইটভাটাগুলোতে থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট। রোদে শুকানোর পর এগুলো উঠছে চুল্লিতে। আগুনের তাপে পুড়ছে ইট। সেই সঙ্গে পুড়ছে যেন শিশুর স্বপ্নও। কারণ, এসব ইটভাটায় অনেক শিশু লেখাপড়া বাদ দিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে।

সম্প্রতি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় দেখা যায়, ভাটাশ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৭ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। এ সময় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিশুর কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে। আবার কেউ কেউ এখন আর বিদ্যালয়ে যায় না। কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ মা-বাবার সঙ্গে ইটভাটার কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত এসব শিশু।

সূর্যের আলো পুরোপুরি উঠার আগেই ৮ থেকে ১১ বছর বয়সী সাকিব,
সুমন,সোহাগ,ঝুমুর,ইমন,শিপন,রাশেদ,সহ আরও অনেক শিশু শ্রমিক ইট টানার কাজ শুরু করে দিন শেষে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার ইট বহন করে প্রতিদিনই। বিনিময়ে টাকা দিয়ে কি করবে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে অধিকাংশ শিশুই জানি না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। পারিবারিক অভাব-অনটনের শিকার হয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে শিশুরা ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করছে।

সুমন,সোহাগ,ঝুমুর,ইমন,শিপন,রাশেদ,সাকিব ই নয় এমন আরও অনেক শিশুরা কাজ করছে বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ও পাহাড়পুর এবং মিঠাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ইট ভাটায়।

ইট ভাটার মালিক পক্ষ ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন’ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ ইট ভাটায় শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইটভাটার মালিক পক্ষ শিশু শ্রম কতটা পালন করেছে তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ বছরের কম বয়সী এমন অনেক শিশুরা কাজ করছে দিব্বিতে। যে হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা তার পরিবর্তে অল্প বয়সী শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইট তৈরির মতো কঠিন কাজ। শুধু ছেলে শ্রমিক নয় রয়েছে কিছু মেয়ে শ্রমিকও যাদের বয়স ১৩ বছরের নিচে।

জানা যায় ইট পরিবহণের মতো এমন ভারী কাজ করতে গিয়ে অনেক শিশুকেই নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত হতে হয়। আহত বা অসুস্থ হলে তাদের নেই কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা, খোঁজ নেয় না ভাটা মালিক পক্ষ। যদিও উপজেলার এম,বি,এস ব্রিকস্, মডার্ণ ব্রিকস ও কামাল এন্ড সন্সের কর্তৃপক্ষ এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ইট ভাটায় কোনও শিশু শ্রমিক নেই।
অপরদিকে বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নামে বেনামে ইট ভাটা। এদের নেই কোনও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ও জেলা প্রশাসকের অনুমতি।

উপজেলার সচেতন ব্যাক্তিগণ জানান, কৃষি জমি নষ্ট ও পরিবেশের ক্ষতি করে ইট তৈরি এবং উর্বর ফসলি জমির উপরের অংশ দিয়ে ইট বানানো বন্ধ করতে হবে।ইট বানানোর নামে প্রতি বছর হাজার হাজার একর জমির উপরের উর্বর মাটি পুড়ে বিনিষ্ট করছে।শুধু উর্বর জমি বিনিষ্ট নয়,ইটভাটা থেকে যে দূষিত গ্যাস ও তাপ নির্গত হয় তা আশে পাশের জীবজন্তুু,গাছ- পালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটায়।ইট ভাটার জন্য অনেক সময় গাছে কোনো ফলই ধরে না,বা ধরলে ও তা অকালে ঝরে পড়ে।এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এক সময় এই উপজেলায় কৃষি জমির পরিমান হ্রাস পাবে এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ব্যাহত হবে।

শ্রম আইনে উল্লেখ আছে, কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে, তাকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থ দন্ড করা হবে। আইন থাকার পর ও আইন বাস্তবায়ন নেই।

বদলগাছি উপজেলার ইটভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, গরিব কিছু শিক্ষার্থী তাদের রোল কলম পেন্সিলের জন্য সকাল করে এসে আমাদের ইট ভাটাগুলোতে ইট উল্টায় ২০-৩০-৫০ টাকার জন্য। যে টাকা দিয়ে তারা লেখাপড়ার সামগ্রী কিনতে পারে। আমরা শিশুদের পার্মানেন্ট হিসেবে নেই না। কিছু শিশু লেখাপড়ার খরচ যোগানোর জন্য নিজে থেকেই সকালে এসে এক থেকে দুই ঘন্টা সময় দেয়।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ আলপনা ইয়াসমিনের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার ফোনে বারবার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি জন্য তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest