সেফ জোন’ থেকে ‘রেড জোনে’ কুমিল্লা বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি

প্রকাশিত: ১:২৬ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

সেফ জোন’ থেকে ‘রেড জোনে’ কুমিল্লা বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি
তানভীর আহমেদ কুমিল্লা প্রতিনিধি ঃ বৈশ্বিক মহামারি নতুন (নভেল) করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে ‘সেফ জোন’ (নিরাপদ এলাকা) হিসেবে চিহ্নিত কুমিল্লা শহর (সিটি কর্পোরেশন এলাকা) হঠাৎ করেই ‘রেড জোনে’ পরিণত হয়েছে। নগর এলাকায় বেড়েই চলেছে কোভিড সংক্রমণ, বাড়ছে প্রাণহানীও। কেবল সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৮ জন। যার মধ্যে শেষ ১১ দিনেই (৯ থেকে ১৯ জুন) সংক্রমিত হয়েছেন ৩৪৬ জন। এ সময়ে জেলাজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৫জন। সব মিলিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ শ’ ৭১ জন। যাদের মধ্যে মারা গেছেন ৭১ জন।যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবের বাইরেও মিলছে মৃত্যু ও সংক্রমণের তথ্য। আর সংক্রমণ-উপসর্গ মিলিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা ইতোমধেই শ’ ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার কুমিল্লায় আরও ৯৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের অর্ধেকসংখ্যক কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা। এদিকে নগরে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৪টি ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন’ হিসেবে শনাক্ত করেছে জেলা করোনাবিষয়ক বিষয়ক কমিটি। ১৯ জুন রাত ১২টা থেকে এ ৪টি ওয়ার্ড লকডাউন করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩ জুলাই জুলাই পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকবে কুমিল্লা সিটির ৩, ১০, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। ‘সেফ জোন’ থেকে ‘রেড জোনে’ কুমিল্লাঅনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা জেলায় গত ৯ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় বুড়িচং উপজেলায়। এরপর ধীরে ধীরে তা অন্যান্য উপজেলায় ছড়াতে থাকলেও নিরাপদ ছিলো শহর কুমিল্লা। এরপর ৪ মে কুমিল্লা নগরের রাজবাড়ি কম্পাউন্ড এলাকায় প্রবাস-ফেরত এক ব্যক্তির (৩৫) করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর দু’দিনপর ৭ মে ওই প্রবাসীর স্ত্রী (৩০) এবং আট বছরের ছেলেরও করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে কুমিল্লা শহরের কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে করোনার সংক্রমণ। ৮ জুন সোমবার পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ২৫২ জন। আর এর ১১ দিন পর অর্থাৎ গতকাল ১৯ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৫৯৮ জনে। তথ্য বলছে, কেবল গত ১১ দিনেই কুমিল্লা সিটিতে কোভিড সংক্রমিত হয়েছে ৩৪৬ জনের শরীরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কুমিল্লা জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও অন্তত ১০টি উপজেলায় সংক্রমণের মাত্রা দ্রুতই বাড়ছে। এখানকার কমিউনিটিতে এটি ঢুকে পড়েছে। শুক্রবার পাঁচজন মারা গেছেন। ভয় নয়, সাহস নিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। নিজেদের সতর্ক হতে হবে। সবাই সতর্ক হলে সংক্রমণ কমবে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত ৩১ মে থেকেই কুমিল্লা শহরে কোভিড সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। ৩১ মে কুমিল্লায় শহরে সর্বোচ্চ ৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত হন। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকার ‘ধারাবাহিকতায়’ সর্বোচ্চ এ আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে কেবল ছাপিয়ে যেতে থাকে। এ পর্যন্ত ৭ বার জেলায় একদিনে এক শ’র এধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ সাতদিনেই জেলায় মোট আক্রান্তের অর্ধেকের কাছাছাছি আক্রান্ত হয়েছেন সিটিকর্পোরেশন এলাকায়। ‘সেফ জোন’ থেকে ‘রেড জোনে’ কুমিল্লাএদিকে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৪টি ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা করোনাবিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুমিল্লা সিটির ৩, ১০, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ১৯ জুন রাত ১২ টা থেকে ৩ জুলাই পর্যন্তর্ লকডাউন (অবরুদ্ধ) থাকবে। গত মঙ্গলবার (১৬ জুন) কমিটির জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কোভিড সংক্রমণের প্রথম ৬০ দিনে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫১৪ জন। কিন্তু এরপর আরও দ্রুততার সাথে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। আর গত ১১ দিনেই জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন সহ¯্রাধিক। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা কোভিড রোগী এখন আড়াই হাজারের কাছাকাছি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখন স্থানীয় কমিউনিটিতে দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ অবস্থায় সবাইকে আরও বেশি সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest