ঢাকা ২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
মোঃ হাসিম উদ্দিন, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর প্রতিনিধি : পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য নানা মানুষ নানা ধরণের কাজকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়ে থাকে। তেমনি এক জন জয়পুরহাটের বেলাল হোসেন । তিনি লালশো (নালশে) বা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।বুধবার সকালে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা চত্বরে দেখা যায় একটা লম্বা বাঁশের মাথায় ছাতা ও থলে হাতে এক জন যুবক গাছে গাছে তন্ন তন্ন করে কি যেন খুজছে, কৌতুহল বশতঃ তার কাছে গিয়ে জানা যায় তার নাম বেলাল হোসেন। সে লালশো বা লাল পিঁপড়া বাসার খোঁজ করছে। তবে যেমন তেমন বাসা হলে চলবে না; চাই ডোল পিঁপড়ার বাসা। যেখানে মিলবে প্রচুর পরিমান সাদা রঙের ডিম। এই পিঁপড়ার ডিমই যে তার জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার। বেলাল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশিয় গাছ গুলোতেই ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তার ডিম পারে। বড় বাসা থেকে ১’শ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষে দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কের সাথে করতে হয়। কারণ ডিম আস্ত না রাখলে মাছে খাই না। বেলাল হোসেন জানান, লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৭ শত টাকা থেকে শুরু করে ১২ শত টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। সাধারণ সৌখিন মাছ শিকারীরা তার কাছ থেকে এই ডিম ক্রয় করে থাকেন। এই ডিম মাছেদের খুব প্রিয় খাবার। বরশিতে আটা-ময়দা-পাউরুটি, একানির মত আধারের সঙ্গে লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম দেয়া হলে বড় মাছেরা সহজে টোপ গেলে। এইজন্য যারা সৌখিন মাছ শিকারি বা টিকিটের কিনে মাছ শিকার করে তাদের কাছে জনপ্রিয় টোপ পিঁপড়ার ডিম। পানির নির্দিষ্ট স্থানে আধার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে জেলেদের কাছেও। এই জন্য অনেক সময় জেলেরা তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকেন। বেলাল আরো জানান, তিনি গরিব মানুষ। দীর্ঘ ১২ বছর যাবত এ কাজ করেন । এই কাজে কোন পুঁজি লাগে না। এজন্য তিনি এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন। সারাদিনে সে এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাতেই চলে তার সংসার।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST