বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির (রিপ্রেজেনটেটিভ) প্রতিনিধিদের ফটোসেশনে অতিষ্ঠ

প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯

বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির (রিপ্রেজেনটেটিভ) প্রতিনিধিদের ফটোসেশনে অতিষ্ঠ
মোঃ শফিউর রহমান কামাল বরিশাল ব্যুরো : বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির (রিপ্রেজেনটেটিভ) প্রতিনিধিদের ফটোসেশনে অতীষ্ঠ সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে কৌশলে ফটোশেসনে মেতে উঠেছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। ফলে নানা দুর্ভোগে পড়ছে রোগীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেবাচিম হাসপাতালে রোগীর চেয়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় বেশি। তারা ডাক্তার ভিজিট করার জন্য রোগী বসার স্থান দখল করে আছে। কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড়ে বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলা রোগীদের অবস্থা নাকাল। রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে কৌশলে ফটোশেসনে মেতে উঠেছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নিজেদের শক্ত অবস্থান কোম্পানির কাছে তুলে ধরতে তারা রোগীর ব্যবস্থাপত্রে নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে নিচ্ছেন। বহির্বিভাগের সামনে এবং কোনো রোগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তোলা শুরু করেন। হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বহির্বিভাগ খোলা থাকা পর্যন্ত রিপ্রেজেনটেটিভদের ভিড় পড়ে। ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা বেরিয়ে এলেই প্রেসক্রিপশন দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কোম্পানির লোকেরা। এতে করে রোগী ও তার স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভিজিট করার কথা। কিন্তু রিপ্রেজেনটেটিভরা নিয়ম অমান্য করে প্রতিদিন হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে ও হাসপাতালে প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে শুরু। এ ছাড়াও হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধ লেখা আছে কিনা তা দেখতে রোগীদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ওষুধ প্রতিনিধি জানান, আমরা এভাবে রোগী বা রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের ভোগান্তি দিতে চাই না। তবে চিকিৎসক আমাদের কোম্পানীর ওষুধ লিখল কিনা সেটা ফটো না তুলে কোম্পানিতে না পাঠালে প্রতি মাসিক মিটিং এ বসে গালিগালাজ শুনতে হয়। সূত্র জানায়, কোম্পানির প্রতিনিধিদের চাকরির পূর্বশর্ত হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকার ওষুধ বিক্রি করতে বাধ্যতামূলক টার্গেট রয়েছে কোম্পানিগুলোর। এ কারণে বিক্রয় প্রতিনিধিরা চাকরি বাঁচাতে টার্গেট পূরণ করতে নানা ছলচাতুরি ও প্রলোভন দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় সব রকমের ওষুধ ডাক্তারকে ম্যানেজ করে বিক্রি করছে। ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা টার্গেট পূরণ করতে ডাক্তার ও প্রতিষ্ঠান ভেদে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে কলম, প্যাড, চাবির রিং থেকে শুরু করে টিভি-ফ্রিজ, আসবাবপত্র সরবরাহও করে থাকে বলে জানা যায়। বিশ্বস্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, অখ্যাত এসব ঔষুধ বাজারজাত করার জন্যে ঔষুধ কোম্পানির এসব রিপ্রেজেন্টেটিভ একজন ডাক্তারকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র কোম্পানির পক্ষ থেকে উপহার দিয়ে থাকেন। তাছাড়া যে ডাক্তার যে কোম্পানির অখ্যাত ওষুধগুলো বেশি প্রেসক্রাইব করেন সেই ডাক্তারের জন্য মাস শেষে প্রচুর স্যাম্পল ওষুধ এবং নগদ টাকা-পয়সা উপহার দিয়ে থাকেন। ফলে বেশিরভাগ ডাক্তার বলা যায়, এক প্রকার জিম্মিই হয়ে আছেন এসব ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছে। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকটি ফার্মেসীর কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং নীতির ফলে দেশে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ঔষুধ বাজারজাতকরণ নীতিমালা থাকলেও তা কেউই মানে না। ফলে অসাধু ও অর্থলোভী ডাক্তার, হাতুড়ে ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টদের ফাঁদে পড়ে অশিক্ষিত ও দরিদ্র রোগীরা ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সেবন করে প্রতারিত হচ্ছেন। এব্যাপারে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে এরআগেও অনেকবার নিষেধ করা হয়েছে। তারা কথা শোনেনা। কিছুদিন যাবত তাদের উৎপাত লক্ষ করেছি। এবং তাদের ডেকে নিষেধ করেছি। এ বিষয়ে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest