বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে টয়লেটে সন্তান প্রসব করা পরিবারকে জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহযোগিতা

প্রকাশিত: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ৯, ২০২২

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে টয়লেটে  সন্তান প্রসব করা পরিবারকে জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহযোগিতা

পারভেজ, বরিশাল প্রতিনিধিঃ

গতকাল ৮ মে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার প্রসূতি ওয়ার্ডের টয়লেটে প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করার সময় নবজাতক প্রসব হয়ে প্যানের মধ্য থেকে পাইপে আটকে যায়। পরে অন্য রোগীদের সহায়তায় পাইপ ভেঙে ওই নবজাতককে জীবিত উদ্ধার করেন নবজাতকের বাবা। এমন ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বিষয়টি বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এর নজরে আসলে তার নির্দেশনা আজ ৯ মে সোমবার সকাল ১১ টায় বরিশাল শেবাচিমে গিয়ে জেলা প্রশাসন বরিশালের পক্ষে সহকারী কমিশনার এনডিসি সুব্রত বিশ্বাস দাস নবজাতকের পরিবারের হাতে হাসপাতাল সমাজসেবার পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। পাশাপাশি তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রবেশন অফিসার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরিশাল সাজ্জাদ পারভেজ, মহানগর প্রবেশন অফিসার শ্যামল সেনগুপ্ত, হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির।

উল্লেখ্যঃ অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ওই নবজাতক পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীর শিল্পী বেগম (২৭) ও মো. নেয়ামত উল্লাহ দম্পত্তির দ্বিতীয় কন্যা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শিল্পীকে গত শনিবার সকালে শের-ই বাংলা মেডিকেলের তৃতীয় তলার প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসক তাকে স্বাভাবিক প্রসবের পাশাপাশি সিজারিয়ান অপারেশনের জন্যও প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেন।

চিকিৎসকের ব্যবস্থাপপত্র অনুযায়ী ওইদিন বিকাল ৩টার দিকে বাইরে ওষুধ আনতে যান তার স্বামী। এর আগে শিল্পীর শরীরে প্রসব বেদনার একটি ইনজেকশন পুশ করেন সেবিকারা। এরপর তাকে বেডে শুয়ে বিশ্রাম করতে বলেন তারা।প্রত্যক্ষদর্শী রোগীর স্বজন আলেয়া বেগম জানান, শিল্পী বেগম টয়লেটে যাওয়ায় কথা বারবার সেবিকাদের জানিয়েছেন। সেবিকারা তাকে বেডে শুয়ে থাকতে বলেন। এরপরও চাপ সামলাতে না পেরে প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে টয়লেটে যান শিল্পী। সেখানে টয়লেটের অপরিচ্ছন্ন নোংরা প্যানে সন্তান প্রসব হয় শিল্পীর। প্রথমে বিষয়টি না বুঝতে পাড়লেও প্যানের মধ্যে কান্না শুনে শিল্পী চেয়ে দেখেন মুহূর্তের মধ্যে নবজাতক প্যানের ভেতর থেকে পাইপের মধ্যে ঢুকে গেছে। তখন তিনি ডাক চিৎকার দিলে তার স্বামীসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। শিল্পীর স্বামী নেয়ামত উল্লাহ জানান, তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ওয়ার্ডের ডাক্তারদের জানালেও তারা কোনো ভ্রক্ষেপ করেননি। পরে তিনি দ্বিতীয় তলায় গিয়ে অন্য রোগীর স্বজনদের সহায়তায় হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে ওই টয়লেটের পাইপ ভেঙে দেখেন নবজাতক কান্না করছে এবং তার হাত পা ছোটাছুটি করছে। টয়লেটের প্যানে পড়ে যাওয়ার পর তাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে নবজাতক ওয়ার্ডের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তিনি। এ ঘটনাকে অলৌকিক হিসেবে দেখছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

হাসপাতালের নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিটের (স্ক্যানু) প্রধান ডা. এমআর তালুকদার মুজিব জানান, এটা একটা এক্সিডেন্টাল ডেলিভারি হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে প্রিসিভিটাস ডেলিভারি (হঠাৎ বা অপ্রত্যাশিতভাবে ডেলিভারি) বলে। যেভাবে ডেলিভারি হয়েছে তাতে খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা ছিল। নবজাতক শিশুটি এখন সুস্থ আছে। তার শরীরের রং ভালো, এক্টিভিটি ভালো, ফিডিংয়েরও আগ্রহ আছে। স্ক্যানু ইউনিটে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest