পবিপ্রবিতে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা মামলার ভয় ভীতি প্রদান

প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৩

পবিপ্রবিতে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা মামলার ভয় ভীতি প্রদান

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সিজিপিএ ও জিপিএ মানদন্ড তুলে নিয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) মাষ্টার ডিগ্রী প্রোগ্রামে ভর্তি স্থগীতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। এ সময় তাদের ব্যাবহৃত মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলা এবং তাদের আটকে রাখা হয়। পরে উল্লেখিত ঘটনায় সংবাদ প্রচার না করার শর্তে মুচলেকা দিলে মধ্যরাতে তাদের ছেড়ে দেয় পবিপ্রবি প্রশাসন ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতা কর্মীরা। শুধু তাই নয় এসকল ঘটনায় সংবাদ প্রচার হলে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নারী ঘঠিত মামলা দেয়ার হুমকী দেন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোস কুমার বসু। এ সময় কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীও হামরার শিকার হন। পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের ইন্ধনে এসব কান্ড হয়েছে বলে দাবি করেন হামলার শিকার নারী শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীরা।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। সূত্র জানায়, সিজিপিএ ও জিপিএ মানদন্ড তুলে নিয়ে মাষ্টার ডিগ্রী প্রোগ্রামে ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিলের কারনে ৫ এপ্রিল দুপুর থেকে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা খবর পেযে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে যান ডেইলি সান ও বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার প্রতিনিধি আবদুল কাইউম, সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন সুজন দাম, বার্তা বাজারের মো.নয়ন মৃধা, আনন্দ বাজার ও বিডি২৪ লাইভ এর স্বপ্নীল দাস, আজকের বসুন্ধরার রাকিবুল ইসলাম তনুসহ একাধিক সংবাদকর্মী। রাত ৯টার দিকে ভিসি অবরুদ্ধের ভিডিও চিত্র নিতে গেলে পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আশ্রাফুল আলম রুবায়েত এর হাতে মারধরের শিকার হয় রাকিবুল ইসলাম তনু। এসময় তনুর মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন ছাত্রলীগ নেতা রুবায়েত। রাত ১০ টারদিকে বেগম সুফিয়া কামাল ছাত্রবাস থেকে নারী শিক্ষার্থীদের ডাক-চিৎকার শুনে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা এগিয়ে যান। নারী শিক্ষার্থীরা সংবাদকর্মীদের কাছে সহায়তা চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা রিষয়টি ভিসি স্বদেশ চন্দ্র সামন্তকে জানানোর চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় সংবদকর্মীরা ছাত্রবাসের ভেতরে নারী শিক্ষার্থীদের মারধোরের দৃশ্য ধারন করার চেস্টা করেন। এতে হামলাকারীরা সংবাদকর্মীদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। পরে পরিস্থিতির অবনতি দেখে সংবাদকর্মীরা দুমকী প্রেসক্লাব চত্বরে অবস্থান করেন। এর কিছুক্ষন পরে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক ও পবিপ্রবি প্রশাসনের বরাত দিয়ে ডেইলী সান ও বাংলা ট্রিবিউন এর প্রতিনিধি আবদুল কাইউমকে তুলে নেন পবিপ্রবির ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি রুবায়েত ও সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব বুখারি এবং তাদের লোকজন। সাংবাদিক কাইউমকে বেগম সুফিয়া হলের সামনে নিয়ে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধর শুরু করেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসুসহ একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসময় কাইউমের কাছ থেকে কর্মরত মিডিয়ার আইডি কার্ড,মোবাইল ও ল্যাপটপ কেরে নেয়া হয়। মারধোর শেষে কাইউমের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে সকল প্রকার তথ্য মুছে দিয়ে মোবাইলটি ভেঙ্গে ফেলেন ছাত্রলীগ নেতা রুবায়েত ও শিহাব। এসব ঘটনার সায় দেন রেজিস্টার সন্তোষ কুমার বসু। দুই ঘন্টার পরে আলোচ্য ঘটনার সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে কাইউমকে ছেরে দেন রেজিস্ট্রার ও ছাত্রলীগ। ছেড়ে দেয়ার মুহুর্তে সংবাদ হলে নারী ঘটিত অভিযোগে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলারও হুমকী দেন রেজিস্ট্রার।
হামলার শিকার তাহিরা লিজা বলেন-গত ৫ এপ্রিল স্নাতকোত্তর ভর্তি জটিলতা নিরসনের জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হল থেকে বের হই। এসময় মেধা,ফারজানা, প্রীতি, অনন্যা, সারন,বিন্তি,নাজিফা,সুস্মিতা, আমরিন,সুমাইয়া,স্বর্না বিভিন্ন অস্ত্রসশ্র নিয়ে আমাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাকে গণরুমে তুলে নেন। পরে তারা তার উপর গনরুমে নেয়ার পরে তারা আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। হামলাকালে তারা বলেন-পবিপ্রবি ছাত্রলীগ শাখার সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক ভাইয়ের নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও কর্মসুচীতে যোগ দেয়ার শাস্তি ভোগ করতে হবে। হামলার পরে সহপাঠিরা পবিপ্রবি হেলথ কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে তারা আমাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। এসময় আমাদের সহায়তা করতে এসে মারধরের শিকার হয় কয়েকজন সাংবাদিক।
এ প্রসঙ্গে পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আশ্রাফুল আলম খান রুবায়েতের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোস কুমার বসু গনমাধ্যমকে বলেন-কিছু সংবাদকর্মীরা ছাত্রী হলে প্রবেশ করে মারামারির ভিডিও করেছে। তাই তারা বাধার মুখে পরেছে। এখানে কোনো শিক্ষার্থী অথবা সাংবাদিককে মারধর করা হয়নি। শুধু ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে। আর কোনো শিক্ষার্থীকেও চিকিৎসা নিতে হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি প্রফেসর স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, সাংবাদিক মারধরের ব্যাপারে কিছু জানিনা। কতিপয় শিক্ষার্থী অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য হৈ চৈ করছিল। তাদের বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গ্রুপিং আছে তারা বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা তারই ফলাফল।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest