ফকিরহাটে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অদক্ষ টেকনিশিয়ান ও অনুমোদন বিহীন চলছে রমরমা ব্যবসা

প্রকাশিত: ৬:১০ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২০

ফকিরহাটে  ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অদক্ষ টেকনিশিয়ান ও অনুমোদন বিহীন চলছে রমরমা ব্যবসা

মোঃ সাগর মল্লিক
বাগেরহাট প্রতিনিধি :
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ফকিরহাটে চলছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ব্যবসার ছড়াছড়ি। সাইনবোর্ডসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে অহরহ ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার বিস্তর নজির রয়েছে। পুরুষদের পরীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয় মেয়েলি রোগের হালফিল বিবরণ। আবার উল্টো চিত্রও আছে।

এসব রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। তা সত্ত্বেও একশ্রেণির ডাক্তারদের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেচ্ছ টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। ডায়াগনস্টিক প্রতারণার শিকার মানুষজন। বার বার অভিযোগ তুলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি অনুমোদন নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করে না। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন পাঠিয়েই বড় বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোগ নিরাময় কেন্দ্র খুলে বসেছেন। ভুঁইফোড় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল বিভাগটি বরাবরই চরম উদাসীন। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও নেয়নি এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিনিয়ত রক্ত মিশ্রিত ব্যান্ডেজ, মাংসের টুকরা, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের আশপাশে, খোলাস্থানেই। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো ইনসিনেটরে পোড়ানোর কথা। এসব বর্জ্য থেকে সিরিঞ্জসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধুয়েমুছে আবার ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটছে। অপরদিকে এই বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে খোলা জায়গায় ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাত্দকভাবে। ডাক্তাররা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরবরাহকৃত স্লিপে টিক মার্ক দিয়ে দেন কোন কোন টেস্ট করাতে হবে। রোগী তার পছন্দমতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করালে ডাক্তার সে রিপোর্ট গ্রহণ করেন না। ডাক্তার তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে চাপ দেন। ওই সেন্টার তাকে কমিশন দেয়। কমিশন নিশ্চিত হলে পরেই চিকিৎসা। পরীক্ষার ফি বাবদ ইচ্ছেমাফিক টাকা-পয়সা আদায় করা হচ্ছে। একই ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য একেক প্রতিষ্ঠানে ধার্য আছে একেক ধরনের ফি। নিয়ম আছে রেট চার্ট স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের চোখে পড়ার মতো স্থানে লাগিয়ে রাখার। কিন্তু সরেজমিন কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই মূল্য তালিকা টানানো দেখা যায়নি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর অজ্ঞতা বা সচেতনতার ওপর নির্ভর করে রেট নির্ধারণেরও নজির রয়েছে। বেশি টাকা দিয়ে টেস্ট করিয়েও সঠিক রোগ নির্ণয়ের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না অনেকেই। এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ‘অতিরিক্ত’ হিসেবেই হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা। এ টাকার মোটা অংশ ‘কমিশন’ হিসেবে চলে যায় ডাক্তারদের পকেটে।

অনেকে টাকার জোরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বনে গেছেন। তাদের কাছে আধুনিক চিকিৎসাসেবার কোনো গুরুত্ব নেই, আছে শুধু লাভের ফন্দিফিকির।

হাতুড়ে টেকনিশিয়ান : এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে সুপরিচিত ডাক্তার বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ তালিকাযুক্ত বিরাট মাপের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হলেও সরেজমিন গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায় না। জানা যায়, রোগী আকর্ষণের জন্যই শুধু বিশেষজ্ঞদের নাম সাইনবোর্ডে লেখা হয় এবং নাম ব্যবহার বাবদ মাসিক ফি দেওয়া হয় তাদের। সেসব ক্লিনিকে গিয়ে সাইনবোর্ডে লিপিবদ্ধ কাউকে পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত সার্টিফিকেটধারী দক্ষ টেকনিশিয়ান পর্যন্ত নেই।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কমকর্তা অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, যেখানে জটিল রোগ নিয়ে মানুষের জীবন মরণ সমস্যা সেখানে অদক্ষ টেকনিশিয়ানের মাধ্যমেই ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। ফলে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি প্রায়ই রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাটা ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে করেন তিনি।

যেমন খুশি রিপোর্ট : বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সরকারি একটি রেট চার্ট দেওয়া আছে। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮০ ও সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজিতে সর্বনিম্ন ১৫০ ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ টাকা, বায়োকেমিস্ট্রিতে সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা, হিস্ট্রোপ্যাথলজিতে সর্বনিম্ন ৫০০ ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা, ড্রাগ এবিউজে সব ধরনের পরীক্ষা সাড়ে ৫০০ টাকা, থেরাপিউটিক ড্রাগের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ও ভাইরোলজির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ ও সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। অথচ এসবের কোনো কিছুই পালিত হয় না ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সর্বত্রই তিন-চার গুণ বেশি ফি আদায় করে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন বলেন বিষটি আমি শুনেছি এ বিষয়ে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest