কালাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে হয়রানি ও হুমকি, অবশেষে ফসলি জমিতে সেচ বন্ধের অভিযোগ l

প্রকাশিত: ৬:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২১

কালাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে হয়রানি ও হুমকি, অবশেষে ফসলি জমিতে সেচ বন্ধের অভিযোগ l

আবু রায়হান, জয়পুরহাটঃ
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেজখন্ড মৌজার গভীর নলকূপ স্কিমের আওতাধীন কয়েক একর আলুর ফসলি জমিতে পারিবারিক কলহের জের ধরে হয়রানি ও বিভিন্ন হুমকি প্রদানসহ গভীর নলকূপ মালিক নুরুল ইসলাম প্রধান (মাষ্টার) এর বিরুদ্ধে আলুর ফসলি জমিতে সেচ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ভূক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালাই উপজেলাধীর মাত্রাই ইউনিয়নের বেজখন্ড গ্রামের আলহাজ্ব ইব্রাহিম প্রধানের ছেলে মো. ফরিদ উদ্দিন প্রধান বেজখন্ড মৌজায় তার মালিকানাধীন দুই একর ফসলি জমিতে ২০০৪ ইং সাল থেকে একই গ্রামের মৃত মনছের আলী প্রধানের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম প্রধান (মাষ্টার) এর ডিপ/গভীর নলকূপ দ্বারা সেচকার্য সম্পূর্ণ হয়ে আসছিল।

বর্তমানে ওই দুই একর জমিতে ফরিদ উদ্দিন প্রধান আলু রোপন করেছেন এবং সেই আলুর ফসলি জমিতে একটি মাত্র সেচ দেওয়ার পর পারিবারিক কলহের জের ধরে নুরুল ইসলাম প্রধান উক্ত জমিতে সেচ দিতে অসম্মতি জানিয়ে পানি প্রবাহের ড্রেন সম্পূর্ণ রুপে কেটে ফেললে নিরুপায় হয়ে ফরিদ উদ্দিন প্রধান স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধিগণ ও কালাই থানার ওসির সহায়তায় আলুর জমিতে সেচ গ্রহণের ব্যপক চেষ্টা ও তদবির করলেও নুরুল ইসলাম প্রধান কারোও কথাতে কর্ণপাত না করে নিজ জেদেই বহাল থেকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদানসহ কেয়ামত পর্যন্ত সেচ প্রদাণে অসম্মতি জানিয়েছে।

পরবর্তিতে উপরোক্ত বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনা মোতাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মাত্রাই ইউনিয়ন) থানা পুলিশসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাদি-বিবাদী উভয়কে ডেকে সমোঝতা করার চেষ্টা করলে তাতেও নুরুল ইসলাম প্রধান সেচ প্রদাণে অসম্মতি জানান।

ফলে উক্ত দুই একর জমিতে রোপনকৃত আলুর গাছ নষ্ট হয়ে ব্যপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

বেজখন্ড গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে নুরুল ইসলাম প্রধান (মাষ্টার) এর সাথে যোগাযোগ করে উপরোক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ও তার ছেলে অলিউল্লাহ এ সময়ে উপস্থিত কৃষি কর্মকর্তা ও কালাই থানার এস, আই মো. এনামুল সহ শতাধীক গ্রামবাসির সম্মুখে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ফরিদ উদ্দিন প্রধানের জমিতে কেয়ামত পর্যন্ত সেচ প্রদাণ না করার কথা বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

ঘটনার বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মাত্রাই ইউনিয়ন) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ইতিপূর্বেও এই বিষয়ে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে একাট প্রতিবেদন দাখীল করেন এবং পরবর্তীতে আবারও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে অত্র এলাকায় এসে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করলে নুরুল ইসলাম প্রধান (মাষ্টার) ও তার ছেলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তার জেদ বহাল রেখে চলে যান। তিনি আরোও জানান নুরুল ইসলাম প্রধান যা করছে এটা সম্পূর্ণ বেআইনী। শিঘ্রয় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অত্র এলাকার ভূক্তভোগী কৃষক ফরিদ উদ্দিন প্রধান জানান, নুরুল ইসলাম প্রধানের ছেলে কোন এক পুলিশ সুপারের বন্ধু হওয়ায় সব সময় তাকে বিভিন্ন ভয়ভিতি ও হুমকি দেওয়া হয়। তার জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করলে নিরুপায় হয়ে গ্রামের ভিতর পুকুর থেকে সামান্য পানি সেচ করেও আলুর গাছগুলো বাঁচানো সম্ভব হয়নি এবং পানি প্রবাহের ড্রেন সম্পূর্ণ রুপে কেটে ফেলাসহ অদ্যাবদি পর্যন্ত সেচ দিতে অসম্মত থাকায় এ মৌসুমে আমার জমির চারপাশের জমিগুলোতে ধান লাগানো শুরু হয়েছে কিন্ত আমি সেচের অভাবে ধান লাগাতে পারছিনা। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। আমরা এর সুষ্ঠ সমাধান ও বিচারসহ সেচ না দেওয়ার তারণে নষ্ট হওয়া ফসলের ক্ষতিপূরুণ চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন গ্রামবাসি জানান, কোন এক পুলিশ সুপার নাকি নুরুল ইসলাম প্রধানের ছেলের বন্ধু হয় তাই যেকোনো বিষয়ে চুন থেকে পান খসলেই
গ্রামবাসিকে বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভিতি প্রদর্শন করেন তারা।

এ ব্যাপারে ইব্রাহিম প্রধান জানান, নুরুল ইসলাম প্রধানের সাথে তার পারিবারিক বিবাদ রয়েছে কিন্তু সেই জের ধরে তার ছেলে ফরিদ উদ্দিন প্রধানের জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করে খুব অন্যায় করা হয়েছে। আমরা সাংবাদিক ভাইদের লেখনীর মারফতে মাননীয় প্রধানমত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে এই ঘটনার সুবিচারের দাবি জানাচ্ছি।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোবারক হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করা হয়েছে এবং সেচ কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest