শিল্পী সমিতির তালা-চেয়ার বদলানো নিয়ে হুলস্থুল

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২

শিল্পী সমিতির তালা-চেয়ার বদলানো নিয়ে হুলস্থুল

বিনোদন প্রতিনিধি: এফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ের গেটে এখন ঝুলছে নতুন চকচকে বড় একটি তালা। বদলে ফেলা হয়েছে আগেরটি। এমনকি ভেতরের চেয়ারগুলোও পাল্টে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে নতুন এবং দামি কয়েকটি চেয়ার। শুধু তাই নয়, সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড পর্যন্ত বদলে ফেলা হয়েছে।

নির্বাচন শেষে নতুন কমিটির শপথ নেওয়ার পরই শিল্পী সমিতির কার্যালয়ের এই পরিবর্তন। যদিও এ পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখেননি কেউ কেউ। বেধে গেছে হুলস্থুল। মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে এবার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে বিজয়ী চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার অভিযোগ, নতুন কমিটির যারা শপথ নিয়েছেন, তারাই পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করেছেন।

জয়ের অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, সেটা ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী চিত্রনায়ক সায়মন সাদিকই জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এফডিসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই অভিনেতা স্বীকার করেন যে, শিল্পী সমিতির তালা-চাবি-চেয়ার-সিসি ক্যামরার পাসওয়ার্ড সবই তারা বদলে দিয়েছেন।

অবশ্য এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন সায়মন সাদিক। তিনি বলেন, শিল্পী সমিতি যখন নতুন একটি কার্যক্রমে যাচ্ছে, নতুন সভাপতি-সেক্রেটারি এসেছেন, উনারা বা আমরা যেটা প্রয়োজন মনে করেছি সেটাই করেছি। তাছাড়া আগের তালার চাবি পাওয়া যাচ্ছিল না। একটা কিছু তো করতে হবে। তাই তালা পরিবর্তন করতে হয়েছে।’

সায়মন আরও জানান, শুধু তালা-চেয়ার নয়, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার পাসওয়ার্ডও বদলানো হয়েছে। নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের অনুমতি সাপেক্ষে সবার মতামত নিয়ে নিরাপত্তার স্বার্থেই এমনটা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ‘পোড়ামন’ খ্যাত এই নায়ক।

প্রসঙ্গত, জায়েদ খান ও তার প্যানেলের কার্যনির্বাহী পদে বিজয়ী চুন্নুর বিরুদ্ধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার অভিযোগ জানানোর পর এক চিঠির মাধ্যমে নির্বাচনের আপিল বোর্ডকে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান এফডিসিতে বৈঠক ডাকেন। গত শনিবার শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল এবং সেখানে নিপুণ, জায়েদ ও চুন্নুদের হাজির থাকতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু সেদিনের বৈঠকে নিপুণ হাজির থাকলেও উপস্থিত হননি জায়েদ খান ও চুন্নু। এমনকি, শিল্পী সমিতির অফিস পর্যন্ত খোলা হয়নি। সেটি তালাবন্ধ ছিল। সেখানে যে দুজন পিয়ন সর্বক্ষণ দায়িত্ব পালন করতেন, তারাও লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে পরে জায়েদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ স্বরসতী পূজা। পিয়নদের ছুটি।’

সেদিন শিল্পী সমিতির কার্যালয় খুলতে না পারায় বাধ্য হয়ে পরে খোলা মাঠেই বৈঠক করে নির্বাচনের আপিল বোর্ড। এছাড়া যেহেতু জায়েদ এবং চুন্নু বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, তাই নিপুণের বয়ান শুনে এবং তার দেওয়া তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন আপিল বোর্ডের সদস্যরা।

সেদিন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান ঘোষণা দেন, টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জায়েদ খান ও চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিল করা হলো এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। এছাড়া কার্যনির্বাহী পদে চুন্নুর পরিবর্তে নাদির খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।

আপিল বোর্ডের ওই সিদ্ধান্তেকে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার হাইকোর্টে আবেদন করেন জায়েদ খান। এরপর হাইকোর্ট জায়েদের বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে তাকে সপদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেন। একইসঙ্গে নিপুণ আক্তারের সাধারণ সম্পাদক পদ স্থগিত করে রুল জারি করেন।

নিপুণ আবার হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের শুনানি কিছু সময় পরেই। এর পরই জানা যাবে চূড়ান্ত হাসিটা কার মুখে ফুটবে। কে বসবে শিল্পী সমিতিতে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে, নিপুণ নাকি জায়েদ? উত্তর জানতে অপেক্ষায় সকলের।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest