নলছিটিতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে সুগন্ধা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন, ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২২

নলছিটিতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে সুগন্ধা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন, ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্ক

এম কে,কামরুল ইসলাম নলছিটি
(ঝালকাঠি) প্রতিনিধি :

সুগন্ধা নদীতে যত্রতত্র অবৈধ ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত অবাধে বালু উত্তোলন ও ক্রয়-বিক্রয় চলাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় গত ১৫ দিনে নদীর পাড়ের বসতভিটা ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাজুরিয়া থেকে কুমারখালি এলাকা পর্যন্ত নদীর পাড় ঘেষে দিন-রাত ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন একটি প্রভাবশালী চক্র হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে অনুরাগ দড়িচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের ফলে মল্লিকপুর এলাকায় নদী থেকে মাত্র ৪০ ফুট দূরে রয়েছে বরিশাল-নলছিটি সড়ক। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে যে কোনো মুহুর্তে সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে আবেদন-নিবেদন করেও স্থানীয় থানা কিংবা প্রশাসনের অসহযোগিতার কথা জানান ভুক্তভোগীরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও রহস্যজনক কারণে নিরব প্রশাসন। তবে সংবাদকর্মীরা জানতে চাইলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় প্রশাসন।

সরেজমিন দেখা যায়, সরকারি ইজারাভুক্ত কোনো বালুমহাল না থাকলেও অবৈধভাবে প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ১৫-২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর তা শত শত বলগেট, কার্গো ও ট্রলার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। যে চক্রটি বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে তাদের এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি বা অনুমোদনও নেই। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বালু। পেশিশক্তির বলে সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে। এ জন্য এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ, তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এরই আগে মাঝে মধ্যে নামকাওয়াস্তে কিছু অভিযান হলেও অবৈধ এ কাজ বন্ধ হয়নি।

নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী ঘর-বাড়িসহ বহু ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু লোকজন ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে নদীর তীরবর্তী অনুরাগ, খাজুরিয়া ও মল্লিকপুর নামে তিনটি গ্রাম।

তারা আরো অভিযোগ করেন, হঠাৎ করে ফসলি জমি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলেও দেওয়া হয় হুমকি। বালু উত্তোলনের সরকারি নীতিমালা থাকলেও কোন তোয়াক্কা করেন না ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রটি। ইজারা না নিয়েই চলছে এই হরিলুট। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব ড্রেজার মেশিন বন্ধ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তারা।

অনুরাগ দড়িচর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙলেও এবার নদী ভাঙনের ভয়াবহ তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ওই চক্রটি। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদার জানান, নদী ভাঙন রোধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিছুদিন আগেও বালু উত্তোলনকারীদের জরিমানা করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest