ঢাকা ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
শাপলা রহমান
আমাদের দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সি ৪ কোটি ১৩ লাখেরও অধিক মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক সেবন করছে। তামাক ্ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে পরোক্ষভাবে ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ। দেশে পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতির ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ধূমপানরত ব্যক্তির বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি গ্রহণ করলে সেটাকে পরোক্ষ ধূমপান বলা হয়। এটা দু’ভাবে আসতে পারে, ধূমপানরত ব্যক্তির জ্বলন্ত বিড়ি কিংবা সিগারেট থেকে নির্গত ধোঁয়া কিংবা ধূমপায়ী ধোঁয়া গ্রহণের পর নিঃশ্বাসের সঙ্গে পরিত্যক্ত ধোঁয়া। বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অংশ থেকে নির্গত ধোঁয়া । যা কোনো কক্ষের মোট ধোঁয়ার ৮৫ শতাংশ ভরে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন গবেষণায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, ধূমপান য²া, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং ধারক ও বাহক। ধূমপান না করে কেউ যেন পরোক্ষভাবে এর কুফলের শিকার না হন, তার জন্য প্রকাশ্যে ধূমপানকে নিষিদ্ধ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারী ্ও শিশুর উপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত করুন। তামাকজাত ধোঁয়া ও পরোক্ষ ধূমপান পরিবেশ থেকে শুরু করে সকল বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভবতী নারীদের উপর পরোক্ষ ধূমপান ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। ২০১০ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২ দেশে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজারই হলো শিশু। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁঁকে পড়ে। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগও দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৮ এর গবেষণা অনুযায়ী প্রতিবছর ৬০ লক্ষ মানুষ ধূমপানের কারনে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ১০শতাংশ মানুষই পরোক্ষ ধূমপানের কারনে মারা যাচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, একজন ধূমপায়ী যেসকল ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে সেসকল ঝুঁকি থেকে অধূমপায়ী ব্যক্তিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। আইন,মরিস ও ওর্য়াল্ড এর ১৯৯৭ এর গবেষণায় অনুযায়ী পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ঘাড় সংক্রান্ত ক্যান্সার, মলাশয়ের ক্যান্সার, ব্রেইন টিউমার, শ্বাসকষ্ট। এগুলো ছাড়্ওা আরো অনেক রোগের জন্য দায়ী পরোক্ষ ধূমপান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও ধূমপানবিরোধী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, ধূমপান আইন মেনে না চলার প্রবণতা, জরিমানার পরিমাণ কম হওয়া এবং তামাক উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কৌশল ্ও দাপটের কারনে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। ২০১৩ সালের তামাক আইনের আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধূমপায়ীকে অনধিক মাত্র ৩০০ টাকা জরিমানা করতে হবে বলে বলা হল্ওে বাস্তবে প্রয়োগ নেই।
আমাদের দেশে তামাকের ব্যবসা অনৈতিক হলেও বৈধ। তাই প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান প্রনয়ন ও এর সঠিক প্রয়োগ, যেখানে- সেখানে, ফুটপাতে অবাধে বিড়ি সিগারেট বিক্রি বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর নীতিমালা তৈরী করতে হবে। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক কোম্পানী থেকে সরকারের সব ধরনের শেয়ার প্রত্যাহার, নতুন করে কোন কোম্পানীর অনুমতি না দেয়া, সব তামাকের ওপর উচ্চহারে কর বাড়ান জরুরী। তাহলে দেশের মানুষ ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে।
তথ্যসূত্র:
1.WHO Report on the Global Tobacco Epidemic, 2008;
2.Law, M., Morris, J., and Wald, N. (1997) Environmental tobacco smoke exposure and ischaemic heart disease (An evaluation of the evidence) . Br Med J. 315: 973–980
লেখক: সাংবাদিক,উন্নয়নকর্মী।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST