গোলাম মোস্তফা খান, খুলনা।
জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় খুলনার রূপসা উপজেলার আলাইপুর বিলের জমির বুকে গড়ে উঠেছে সবুজ ধানক্ষেত। এ বিলের চারদিকে এখন শুধু সবুজ ধানের হাসি। এতে এলাকার কৃষকরা দারুণ খুশি।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আলাইপুর গ্রামের এই বিলের জমিতে প্রতি বছর প্রায় ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল ১শ’ ৫০ হেক্টর, আর ৫০ হেক্টর করে হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের আবাদ হয়। এ ধানের ওপরই এ গ্রামের অন্তত ৫০ কৃষক পরিবারের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে । এবছর দাম বেশি হওয়ায় ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে খুব আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এই এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চাষিদের পাশে থেকে ধান সহ বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ¢ ও সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে চলেছেন । তাই বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কৃষকেরা জুন মাসের শেষের দিকে আদর্শ বীজতলায় আমন ধানের বীজ বপণ করেন। কিন্তু এরপরই একটানা কয়েকদিন প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে আমন ধানের বীজতলা ও আলাইপুরের বিলের জমি পানিতে প্লাবিত হয়।

প্রসঙ্গত, আলাইপুর গ্রামের উত্তর দিকে অবস্থিত ঘোষের খাল দিয়ে সাধারণত বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী গ্রামের জনৈক কৃষক উক্ত খালের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় আলাইপুর বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে এলাকার কৃষকেরা আমন ধানের চাষ নিয়ে দারুণ চিন্তিত হয়ে পড়েন।

উক্ত বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে এ এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় আলাইপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মোঃ আঃ কাদের শেখ এর নেতৃত্বে ৫/৬ জন কৃষক রূপসা উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ নাসরিন আক্তার ও উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মোঃ ফরিদুজ্জামান এর শরণাপন্ন হন। এই দুই কর্মকর্তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় এবং আলাইপুর গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষকদের উদ্যোগে উক্ত মাছের ঘেরে পিভিসি পাইপ স্থাপন করে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করা হয়। ফলে কৃষকরা নব উদ্যমে আবারও আমন ধানের বীজতলায় বীজ বপণ ও জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু জুলাই মাসের শেষের দিকে আবারো প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে পুনরায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আলাইপুর গ্রামের কৃষকরা এবারও রূপসা উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কৃষি অফিসার মহোদয়ের কাছে যান। এ দুই কর্মকর্তার নির্দেশে পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিহির কুমার পাল এর সহযোগিতায় উক্ত মাছের ঘেরের পাশে নালা কেটে বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে আলাইপুর বিলের জলাবদ্ধতা দূর হয়। কৃষকরা আবারো বিলের জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেন।

আলাইপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক মোঃ আঃ কাদের শেখ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় তিনি এ বছর এই বিলে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন। একই গ্রামের কৃষক মোঃ লুৎফর রহমান ৫ বিঘা, হাফেজ মোঃ আনোয়ার হোসেন ২ বিঘা, মোঃ অহেদ সরদার ৩ বিঘা, নজরুল মিনা ২ বিঘা, তোরাপ সরদার ৪ বিঘা ও মো: ইসলাম সরদার ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন বলে জানান। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা এখন ধানের চারাগুলোর নিবিড় পরিচর্যা করছেন। এতে চারাগুলো কুশি ছেড়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে মাঠে সবুজ কার্পেটে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই আলাইপুর বিলের চারদিকে এখন শুধু সবুজ ধানের হাসি।
জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় আলাইপুর বিলের জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করতে পেরে কৃষকরা অনেক খুশি। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধানের কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন বলে কৃষকেরা আশা করছেন। এতে আলাইপুর গ্রামের কৃষকদের অন্নের যোগান হবে, ফুটবে মুখে হাসির ঝিলিক এ আমাদের প্রত্যাশা।