স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকী ইলেকট্রনিক সিগারেট

প্রকাশিত: ১:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯

স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকী ইলেকট্রনিক সিগারেট

শাপলা রহমান 

ধূমপানবিরোধী প্রচারের ফলে ধূমপানের বদ অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টা করছেন অনেকে বা ছেড়ে দিয়েছেন। অজ্ঞতার কারনে অনেকেই ধূমপানের আধুনিক সংস্করণ ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে বিশ্বের অনেক দেশে ইতোমধ্যে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ই-সিগারেটের প্রচলন বেড়েছে। এর ব্যবহারকারীদের ধারণা, তামাকজাত সিগারেটের চেয়ে এটি স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর। প্রাথমিকভাবে মনে করা হতো, ধূমপানের ইচ্ছা কমাবে ই-সিগারেটের ব্যবহার এবং আস্তে আস্তে ধূমপান থেকে একেবারেই সরে আসতে পারবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ধূমপান নিয়ন্ত্রণের বদলে ব্যবহারকারীরা এ ইলেকট্রনিক ডিভাইসেই আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ই-সিগারেট ব্যাটারিচালিত একধরনের যন্ত্র। ইলেকট্রনিক সিগারেটের ভেতরে থাকে নিকোটিনের দ্রবণ, যা ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়। এর ফলে ধোঁয়া তৈরি হয়। এটি ম¯িÍষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে যা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে একেবারে প্রথমে আসবে নেশা বা আসক্তি। ই-সিগারেটে ও নিকোটিন থাকে, আর নিকোটিনই আসক্তির কারণ। নিকোটিন থেকে দূরে থাকতে গেলে ই-সিগারেট থেকেও দূরে থাকতে হবে। ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটতে থাকে, সেই সময় ধূমপান বা ই-সিগারেটে আসক্তি তৈরি হলে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। ধূমপান করে না অথবা ই-সিগারেট ব্যবহার করে না এমন লোকদের চেয়ে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের ২৯ শতাংশ বেশি অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ও শ্বাসকষ্টে ভোগেন বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে।

গত তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ৩২ হাজারের বেশি ই-সিগারেট ব্যবহারকারী ও ধূমপায়ীর মধ্যে গবেষণায় এ তথ্য পেয়েছেন। ই-সিগারেটের পাইপে তামাকজাতীয় বস্তু না থাকলেও এটি ব্যবহারকারী অনেকেই শ্বাসজনিত রোগে ভোগেন। ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর ফুসফুস তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার পরও বিসদৃশভাবে রোগে আক্রান্ত হন। ই-সিগারেট ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর এবং প্রচলিত সিগারেট পান করার প্রভাবের চেয়ে এটি স্বতন্ত্র। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের সিগারেট পানে অভ্যস্ত লোকেদের ওপরের চারটি রোগে ৩ দশমিক ৩ গুণ বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ধূমপান করে না এমন লোকদের চেয়ে তামাক থেকে প্রস্তুতকৃত সিগারেট পান করেন এমন লোকরা ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফুসফুস রোগে ভুগছেন। কিন্তু গবেষণায় অংশগ্রহণকারী লোকদের মধ্যে যারা ই-সিগারেট ও তামাক থেকে তৈরী সিগারেট উভয়টিই পান করেছেন তাদের মধ্যে ফুসফুসের রোগ সবচেয়ে বেশি। একটা সময় আমাদের দেশে শুধুমাত্র অভিজাত এলাকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে।এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠীদের কাছ থেকে তারা এ অভ্যাস রপ্ত করছে। ইলেক্ট্রনিক এ ডিভাইসটি এখন হাতের নাগালে স¯Íায় পাওয়া যাচ্ছে। দেশে অল্পবয়সীরা ইদানীং ই-সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তার চেয়েও বড় কথা, আজ পর্যন্ত কোনো গবেষণায় এ কথা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি যে, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়াতে সাহায্য করে। উল্টো এর কারণে ধূমপানের মাত্রা বেড়ে গেছে, তেমনটিই দেখা গেছে। তাই সকল প্রকার ধূমপান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা,সাথে সাথে সরকারকে জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন হুমকী এই ই-সিগারেট অন্যান্য দেশের মতো দ্রæত নিষিদ্ধ করার জরুরী। লেখক-সাংবাদিক এ উন্নয়ন কর্মী


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest