দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ২:১৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২০

দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি

-শাপলা রহমান

বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় নারীরা ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার বেশী করে থাকে। ২৮ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। আর পুরুষের সংখ্যা সেখানে দুই শতাংশ কম অর্থাৎ ২৬ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ বা ৪৩ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোন না কোন ভাবে তামাক সেবন করেন। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০০৯ তে বলা হয়েছে এখানে ধূমপানের হার ২২ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের হার ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের প্রবনতা অনেক বেশি। পানের সাথে জর্দা, সাদাপাতা ও গুলের ব্যবহার দেখা যায়। বিভিন্ন সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে পান, সুপারি নানা রংয়ের পান মসলা খাওয়ার চল রয়েছে। পান শুপারীর সাথে তামাক, জর্দা খাওয়ার গ্রহণযোগ্যতা সামাজিক ভাবেই রয়েছে বলে এর ক্ষতির দিক কেউ দেখেনি। ক্ষতিকর এসব উপাদান এক সময় জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ন হয়ে দাঁড়ায়। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা ৩০ কোটি মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে রেখেছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতে ২২ কোটি, বাংলাদেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ এবং মিয়ানমারে ১ কোটি ১০ লাখ লোক ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনকারী নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশ ও ভারতে । বিশ্বের ৭০ টি দেশের ৩০ কোটি মানুষ সরাসরি তামাক পাতা গ্রহণ করে। এদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতের। ২শ’৫৯ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি বছর তামাক সেবন করার কারনে ১০ লক্ষেরও বেশী লোক মারা যায়। যারা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায় তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ, যারা ব্রংকাইটিস রোগে মারা যায় তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এবং যারা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এ মারা যায় তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ লোক তামাক সেবী। ধোঁয়াবিহীন তামাকে আসক্তি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়ছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকে মুখগহ্বর, খাদ্যনালী, অগ্নাশয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যে যেমন মৃত শিশু, কম ওজন শিশুর জন্মে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের সঙ্গে হৃদরোগ, ডায়রিয়া এবং ষ্ট্রোকের গভীর সম্পর্ক আছে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার নিষিদ্ধে প্রথমেই প্রয়োজন জনসচেতনতা,তামাক দ্রব্যে উৎপাদন, বাজারজাতকরন ও বিক্রির উপর আইনী প্রয়োগ। একই সাথে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ ও সংশোধনী ২০১৩ সালের আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরী। আমরা জানি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ সংশোধনী ২০১৩ তে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যেমন-জর্দা, গুল, খৈনী, সাদাপাতা ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ আইন ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যসহ সব ধরণের তামাক পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রবর্তন, বিজ্ঞাপন, প্রচরণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধকরণের কথা বলা হয়েছে। -লেখক: সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest