লন্ডভন্ড উপকূল নিহত ২৪

প্রকাশিত: ৬:২২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০১৯

লন্ডভন্ড উপকূল নিহত ২৪

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ প্রবল শক্তি নিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকুলে আঘাত হানে। এতে লন্ডভন্ড হয় খুলনা-সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা। এছাড়া দেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দমকা হাওয়ায় গাছ ও ঘরচাপা পড়ে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে ১১ জেলায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত রবিবার ভোররাত থেকে খুলনা সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। ঝড়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। কাচা ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উপকূল অতিক্রমরত প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও সামান্য উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভোরে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে।
বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল ভারতের সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্কের’ ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়।
২৪ জনের মৃত্যু : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দমকা হাওয়ায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে এগারো জেলায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর মধ্যে বরিশালে দশজন, খুলনা, বরগুনা, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জে দুইজন করে এবং পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে একজন করে মারা গেছেন।
এর বাইরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে আবুল কালাম নামে ৪০ বছর বয়সী এক মাছ চাষী শনিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
তবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী মাসুদুল আলম বলেছেন, কালামের মৃত্যুর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ‘কোনো সম্পর্ক নেই’।
বরিশাল : বরিশালে নদী থেকে নয় জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যারা ভোলায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ ছিলেন বলছে পুলিশ।
বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম বলেন, রোববার ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভোলার ইলিশা নদীতে একটি ট্রলার ডুবে যায়।
ট্রলারটি পানির তোড়ে ভেসে মেহেন্দিগঞ্জের মাছকাটা ও মেঘনা নদীর মোহনায় চলে আসে। পরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ ট্রলারসহ নয় জেলের লাশ উদ্ধার করে।
দুপুরে ২৪ জন জেলে চাঁদপুরে মাছ বিক্রি করে ট্রলারে ভোলার চরফ্যাশনে ফিরছিলেন। পথে মেঘনা নদীর ভোলা-বরিশালের সীমান্তবর্তী এলাকায় ট্রলারটি ডুবে যায়।
রোববার দুপুরে মেঘনা নদীর ভোলা-বরিশাল সীমান্তবর্তী এলাকায় ২৪ জেলেসহ ট্রলারটি ডবে যায়। এতে একজন নিহত হন। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ছিলেন ১০ জন, যাদের মধ্যে নয়জনকে বরিশালে উদ্ধার করা হয়। এখনও একজন নিখোঁজ আছেন।
একই জেলায় (বরিশাল) গাছের নিচে চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান।
রোববার বেলা ২টার দিকে উজিরপুর পৌর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনায় নিহতের নাম- আশালতা মজুমদার (৬০)।
জেলা প্রশাসক বলেন, বুলবুল এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হওয়া বইছিল। এ সময় নিজ ঘরেই অবস্থান করছিলেন আশালতা। বাতাসে একটি গাছ উপড়ে তার ঘরের উপর গিয়ে পরে। এতে গাছের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
খুলনা : খুলনার দীঘলিয়া এবং দাকোপ উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে দুইজনের নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নিহতরা হলেন- দীঘলিয়া উপজেলায় সেনহাটির আলমগীর হোসেন (৩২) এবং দাকোপের প্রমীলা মন্ডল (৫২)।
দাকোপের ইউএনও আবদুল ওয়াদুদ জানান, প্রমীলা শনিবার রাতে দক্ষিণ দাকোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারে ছিলেন। ঝড় দুর্বল হওয়ার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি নিজের বাড়ি ফিরে যান। সেখানে একটি গাছ ভেঙে পড়লে তাতে চাপা পড়ে প্রমীলার মৃত্যু হয়।
দিঘলিয়া থানার ওসি মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, সকাল ৯টার দিকে সেনহাটি গ্রামে নিজের বাসার কাছে ঝড়ে ভাঙা সজনে গাছের নিচে চাপা পড়ে আহত হন আলমগীর হোসেন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
বরগুনা : শনিবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের এক আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে হালিমা খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।
৭০ বছর বয়সী হালিমা ওই ইউনিয়নের বানাই গ্রামের মোজাফ্ফর আলীর স্ত্রী। ঝড়ের কারণে শনিবার ডিএন কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন তিনি।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিচুর রহমান বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন হালিমা খাতুন।
এদিকে বিকালে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের ডাল কাটতে গিয়ে প্রাণ গেছে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবনগোলা গ্রামের বাসিন্দা মহিবুল্লাহর।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভাঙা ডাল কাটতে গাছে উঠেছিলেন মহিবুল্লাহ। পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হলে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, শনিবার সকালে বঙ্গোপসাগরের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় ১৫ জন জেলেসহ একটি মাছধরার ট্রলার নিখোঁজ হয়। রোববারও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
গোপালগঞ্জ : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে গাছ ভেঙে পড়ে গোপালগঞ্জে দুই জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
নিহতদের মধ্যে সেকেল হাওলাদার (৭০) দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়েনের বান্ধাবাড়ি গ্রামের হাসান উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। দুপুরে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে একটি গাছ ভেঙে পড়লে তিনি তার নিচে চাপা পড়েন।
নিহত মাঝু বিবি (৬৭) সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামের মৃত বাবন কাজীর স্ত্রী। মাঝু বিবিও ঝড়ের মধ্যে গাছচাপা পড়েন বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
পটুয়াখালী : দমকা হওয়ায় গাছ উপড়ে বসত ঘরের উপর পড়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় হামেদ ফকির নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন।
শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের উত্তর রামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন জানান।
নিহত হামেদ ফকিরের বয়স ৬৫ বছর। পেশায় তিনি ছিলেন একজন মৎস্যজীবী।
ভোলা : ঝড়ের মধ্যে ভোলার ইলিশায় মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় এক জেলের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে ১৩ জন।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, চরফ্যাসনের আবদুল্লাহপুরের ২৪ জেলেসহ একটি ট্রলার চাঁদপুর মৎস্য ঘাটে মাছ বিক্রি করে চরফ্যাশনে আসার সময় মেঘনা নদীতে ডুবে যায়।
উদ্ধারকর্মীরা একজনের লাশ এবং ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করলেও ১৩ জন জেলে নিখোঁজ থাকে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
শরীয়তপুর : ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
নড়িয়া থানার ওসি হাফিজুদ্দিন জানান, রোববার বিকালে উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের দেওজড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. আলী বক্স ছৈয়ালের বয়স ৭০ বছর। গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান বলে জানান ওসি।
পিরোজপুর : দমকা হাওয়ায় গাছ চাপা পড়ে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে নাজিরপুর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান।
নিহত ননী শিকারীর বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নের লড়া গ্রামে।
ওসি বলেন, সকালে বুলবুলের তান্ডব শুরু হলে গাছ উপড়ে ননীর বাড়ির উপর পড়ে। এ সময় গাছের নিচে চাপা পরে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।”
এছাড়া উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বসতঘরের উপর গাছ পড়ে দুই ভাইবোন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে ইউপি চেয়ারম্যান হাসনাত ডালিম জানান।
এরা হলেন- কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মধ্য কলারদোয়ানিয়া গ্রামে নজরুল ইসলামের ছেলে নাসির (১৬) ও মেয়ে সুমী (৮)।
পিরোজপুর সদর উপজেলায় ঝড়ে উপরে পড়া গাছে সরাতে গিয়ে শহরের খুমরিয়া এলাকায় ইসতিয়াক আহমেদ ইমন নামে এক কলেজ ছাত্র আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মাদারীপুর : মাদারীপুর সদর উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় ঘর চাপা পড়ে সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস জানান।
মৃত সালেহা বেগম সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামের আজাদ খাঁয়ের স্ত্রী।
সাইফুদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় দমকা বাতাসে সালেহা বেগমের ঘর বাতাসে হেলে পড়ে। এ সময় ঘরের ভেতরের একটি আলমারি গায়ের উপর পড়ে গু রুতর আহত হন সালেহা। তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপাল ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে সামিয়া খাতুন নামে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও দুইজন।
সামিয়া ওই উপজেলার দর্পনারায়ণপুর গ্রামের বাবুল শেখের মেয়ে।
পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় জানান, রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে একটি মেহগনি গাছ উপড়ে টিনের ঘরের ওপর পড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা : ঝড়ের সময় সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গাছ পড়ে আহত এক ক্ষেতমজুরের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত নিছার সরদার (৬৫) তালা উপজেলার মহান্দী গ্রামের কানাই সরদারের ছেলে।
তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে রোববার ভোর রাতে নিছার সরদারের ঘরের উপর একটি মেহগনি গাছ উপড়ে পড়ে। এ সময় নিছার সরদার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
গাছের একটি ডালে তার বুকে মারাত্মক আঘাত লাগে। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
সন্ধ্যায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে ইউএনও জানান।
ইউএনও ইকবাল আরও জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিছারের পরিবাররকে ঘর করে দেওয়া হবে। এছাড়া তার পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া বলেও জানিয়েছি।
১৪ জেলায় ঘরবাড়ি ও স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় ১৪ জেলায় কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, স্কুল, ফসল, গাছপালা, বেড়িবাঁধ, সড়ক ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্যোগপূর্ণ জেলাগুলোতে ৫ হাজার ৫৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিয়ে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরায় কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনায় কিছু গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতি হওয়ার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বাগেরহাটে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন হচ্ছে ৭৮টি। এতে আনুমানিক দুই লাখ ২৬ হাজার লোক ক্ষতি হয়। ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৩০টি। সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ১৬ হাজার ৫৮০টি ঘরবাড়ি। ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমি।
ভোলার লালমোহন উপজেলায় লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে টর্নেডো হয়েছে। ৫-৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে ঝড়ে কিছু ধানি জমির ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বরিশালের কোনও উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি স্কুলের চালা উড়ে গেছে। পটুয়াখালীতে ৮৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনীতে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি নেই। পিরোজপুরে প্রচুর বৃষ্টি ও প্রচন্ড বাতাস রয়েছে। লক্ষীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। নোয়াখালীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার কোনও উপজেলা থেকেই ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত লোকেরা যার যার বাড়িতে ফিরে গেছে। কক্সবাজারে কোনও ক্ষয়ক্ষতি নেই।
এছাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৮ ও ৯ নভেম্বর উপকূলীয় জেলাগুলোতে চার হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নগদ সহায়তা, ১৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৯ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্গতদের সহায়তা দেন।
বিআরইবির ২৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ গ্রাহক এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। গত শনিবার ভোররাতে ঝড়টি আঘাত হানার পর থেকে উপকূলীয় নয়টি জেলার অন্তত ২৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে বিআরইবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এসব জেলায় ৭০ হাজার কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও ইনসুলেটরসহ নানা যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আনুমানিক ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আজকে বিকাল ৫ টার মধ্যে আমরা ৭০ থেকে ৮০ পারসেন্ট এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে পারব। বাকি ১০ পারসেন্ট রাত ৯ টার মধ্যে দিতে পারব বলে আশা করি। বাকি যে ১০ পারসেন্ট থাকবে, তা দিতে দিতে আগামিকাল হয়ে যাবে’। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৯ হাজার কর্মীর সঙ্গে সমিতির আরও ২০০ কর্মী লাইন মেরামতের কাজের রয়েছে বলে তিনি জানান।
ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯ টায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। রবিবার ভোর ৫ টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছায়; শক্তি হারিয়ে সকালে বুলবুল পরিণত হয় গভীর স্থল নিম্নচাপে।
ঝড়ে উপকূলীয় জেলাগুলোর অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি; ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest