দেশে ধুমপান প্রবন নারীর সংখ্যা বাড়ছে-তামাক কোম্পানীর লাগাম টানতে হবে এখনই।

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৯

দেশে ধুমপান প্রবন নারীর সংখ্যা বাড়ছে-তামাক কোম্পানীর লাগাম টানতে হবে এখনই।

শাপলা রহমান- একসময় ৬০ এর দশকের নায়ক-নায়িকাদের বিবেচনা করা হত ফ্যাসন আইকন হিসেবে। মনে করা হত সমাজ-সংস্কৃতিতে নতুন কিছুর সংযোজনা তাদের হাত দিয়ে প্রবেশ করছে। ৬০ এর দশকের ভারতীয় বাংলা বা হলিউডি সিনেমার নায়কদের পাশাপাশি নায়িকাদের ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেটের দৃশ্য গোটা সিনেমা হলের পরিবেশটা পাল্টে দিত। আহা কি সাহসী সব ব্যাপার! সে সব দৃশ্য দেখে আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ গামী নারীরাও চাইত আগল ভাঙ্গতে। তখনকার লিজেন্টদের কথা বলা, শাড়ি পরার স্টাইল, চুল বাঁধা, কাজল পরা চোখের সাঁজ সব কিছুতেই থাকত মাদকতার ছোঁয়া। মাঝ খানে চার দশকের অধিক সময় পেরিয়ে গেছে। সেই ৬০ এর দশকের নায়ীকাদের অনুকরনে চলা পোশাক-আশাকে পরিবর্তন এসেছে অনেকবার। কিন্তু নারীদের মুখে থাকা সিগারেটের জলন্ত আগুন আজো নেভেনি। বরং দিনকে দিন তা বেড়েই চলেছে।  সিগারেট কোম্পানীগুলো নায়ক-নায়কিাদের ইমেজ কাজে লাগিয়ে আধুনিকতার ধুয়ো তুলে সেদিন যে ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল এখন তার পরিধির ও বিস্তার ঘটিয়েছে অনেক। তাদের চটকদার বিজ্ঞাপন আর অভিনব কৌশলের কাছে পুরুষের পাশাপাশি হেরে গেছে এদেশের সাধারন নারীর বাস্তবতা বোধ। বোধ শুন্য মানুষগুলো ধুমপানে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আনন্দ বেদনার সঙ্গী ভাবতে শুরু করা সিগারেট বা তামাক পন্য কখন তাদের ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে মরনের দিকে। সেদিকে কোন ভ্রæক্ষেপ নেই যেন! নেই কোন সচেতনতাবোধ। বলছি নারী ধুমপায়ীদের কথা। দেশে নারীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। দ্য টোব্যাকো এটলাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার কোটি ১৩ লাখ, যার ২৩ শতাংশ বা দুই কোটি ১৯ লাখ ধূমপায়ী।

বিশ্বে নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যা কম নয়। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নারী সিগারেটে আসক্ত। চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এর প্রতিবেদনে সিনিয়র গবেষক ডক্টর ইমানুয়েলা গাকিডোও বলেছেন ” বিশ্বে প্রতি চারজনে একজন ধূমপান করছে। অকালে মৃত্যুর প্রধান একটি কারণ ধূমপান। ক্রোয়েশিয়া ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ ধূমপানের জন্য অন্যতম একটি দেশ। নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যা কম মনে হলেও অবাক করা বিষয় হলো নারী ধূমপায়ীর তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করে আছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া। নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ২২টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২২টি দেশকে নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে ক্রোয়েশিয়া উইক জানায়, বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন। আর এ ধূমপায়ী নারীদের মধ্যে ২৪ শতাংই শিক্ষার্থী। টিন এজারদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চাকরিজীবীরাও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ জাতীয় য²া নিরোধ সমিতি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিবেদন থেকে প্ওায়া তথ্যে জানা যায়, দেশে মোট নারীর দুই কোটিরও কিছু বেশি ধূমপানে আসক্ত।

এদিকে,দ্য টোব্যাকো এটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪.৬ শতাংশ পুরুষ ও ৫.৭ শতাংশ নারী তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের প্রবণতা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এখানে ২৭.২ শতাংশ বা ২ কাটি ৫৯ লাখ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল ২০০৩ সালে প্রণীত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল চুক্তিতে বাংলাদেশ ছিল প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। ২০০৪ সালে অনুস্বাক্ষরের পরেও বাংলাদেশ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০৫ মোতাবেক ২০০৬ সালে নীতি প্রণীত হয়। পূর্ববতী আইনের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ছিল এ আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সম্পর্ক কোন ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যেমন-গুল, জর্দা এবং খৈনী যা অধিকাংশ মানুষ সেবন করে সে সব সম্পর্কে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোন সুযোগ ছিল না। ২০১৩ সালে নতুন আইন ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী সহ) সংসদে পাশ হয়। সংশোধিত আইনে সব রকম ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য আইনের আওতায় আনা হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ধূমপান নারী-পুরষ নির্বিশেষে সবার জন্যই ক্ষতিকর। তবে জিনগত কারণে নারী ধূমপায়ীর বিপদ তুলনামূলক অনেক বেশি। সন্তান ধারণে জটিলতা ও সন্তানের জীবনও হয়ে ওঠে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। ধূমপায়ী নারীর সন্তান গর্ভ থেকেই নানা ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। বাংলাদেশ অবস অ্যান্ড গাইনোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গামিনা চৌধুরী বলেন, নারী ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক ছাড়াও জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি, প্রজননতন্ত্রে সমস্যা, গর্ভাবস্থায় নানা জটিলতা, সন্তান ধারণে প্রতিবন্ধকতা, সন্তানের জন্মগত ত্রুটির মতো বিষয়গু।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest