শামসুল কাদির মিছবাহ,সুনামগঞ্জঃ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গতা এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার দুপুরে শহরের পুরাতন বাস স্টেশনে একটি রেস্টুরেন্টের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম নূরুল বলেন, সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা চলাকালীন সরকারি কোনও সহযোগিতা ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেছে বানভাসি। বন্যায় সরকারি-বেসরকারি ভবন, স্কুল কলেজ, হাসপাতাল তো বটেই, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিটি বহুতল ভবন পরিণত হয় এক একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন আশ্রিতরা। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও সরকার ও প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল না।
বিএনপির দাবি, দেশের এই মহাদুর্যোগ পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও সুনামগঞ্জের দুর্গত অসহায় মানুষের জন্য মাত্র ৬৭৫ মেট্রিকটন চাল আর নগদ এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ছাড়া কোনও বিকল্প দেখছে না। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের দেওয়া বক্তব্য শোনে আমরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছি।এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করার পরিবর্তে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বার বার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের গুণকীর্তণ করেছেন।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য অসত্য দাবি করে সেটি প্রত্যাখ্যান ও তার দলীয় সংকীর্ণ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপি। সেই সাথে বন্যায় মৃত্যু নিয়ে জেলা প্রশাসক যে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করে দলটি।
জেলা বিএনপি জানায়, ভয়াবহ বন্যা শুরুর পর থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আগামীর রাষ্ট্র নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্তরিকতার সাথে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণ, রান্না করা খাবার ও জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে চলছেন। প্রতিটি উপজেলায় আমাদের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের সেবায় নিয়োজিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুর্গতদের পাশে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
জেলা বিএনপির দাবি, এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার আন্তরিক ছিল না। বন্যা মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যতটুকু ভূমিকা রাখা প্রয়োজন সেটা তারা করেননি। এমতাবস্থায় দুর্গত এলাকার মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে জেলা বিএনপি খুইই উদ্বিগ্ন। এই অঞ্চলের মানুষকে বানের পানিতে ডুবন্ত রেখে তারা পদ্মসেতু উদ্বোধনের আনন্দ-উল্লাসে মত্ত। মানুষের এখন দরকার সহায্য, সহযোগিতা এবং ঘুরে দাঁড়ানো।
এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ এই দুর্যোগে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসার দাবি জানায় বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মল্লিক মঈন উদ্দিন সোহেল, নাদির আহমদ,অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী, সেলিম আহমদ, আবুল কালাম, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহিন, জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর শওকত।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ কয়েস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মুনাজ্জির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম, যুবদল নেতা মমিনুল হক কালার চান, সুহেল আহমদ, দুলু, আনোয়ার আলম প্রমুখ।