গানের কারনে এলাকায় মামলা খাওয়া দুই শিল্পীর ইতিকথা ll

প্রকাশিত: ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২০

গানের কারনে এলাকায় মামলা খাওয়া দুই শিল্পীর ইতিকথা ll

মোঃ সোহেল বিনোদন রিপোর্টার :গানের কারনে এলাকায় মামলা খাওয়া ২ শিল্পী মনির খান ও শিবচরের সোহেল’র ইতিকথার একাংশ তুলে ধরেছেন আমাদের বিনোদন রিপোর্টার। মামলা খেয়ে মনির খান রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের জামা কাপড়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে কয়েক গ্রাম পেরিয়ে রাত ১ টায় পরিচিত ইউনুস আলী মোল্লার বাড়িতে পৌঁছে ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে ভাত খেতে চেয়েছিলেন (প্লান ছিলো সেখান থেকে সকালে ঢাকা চলে আসবেন)।


ইউনুস মোল্লা তার স্ত্রীকে বললেন মনির কে ভাত দিতে। স্ত্রী বললো খাবারের তো কিছু নাই, কিভাবে দিবো? মনির খান তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে করলেন। একদিকে পুলিশে এ্যারেস্টের ভয়ে এত রাতে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া, তারপর আবার ক্ষুধার জ্বালায় ভাত খেতে চাওয়া, সবমিলিয়ে ইতস্ততবোধ করলেন। তখন তার মেয়ে বললেন যে, মা সামান্য ভাত আর একটু ডাল আছে, সাথে একটু ভর্তা করে দিতে। মেয়ের কথা মতো ইউনুস মোল্লার স্ত্রী ভর্তা বানাতে গিয়ে সরিষার তেল মনে করে মনের অজান্তেই নারিকেল তেল দিয়েছিলেন, কারন ২ তেলের বোতল দেখতে প্রায় একই রকম ছিলো। খেতে বসে মনির খান নারিকেল তেল বুঝতে পেরেও অসহায়ের মতো কাউকে কিছু না বলে খেতেই লাগলেন। কিছুক্ষণ পরেই তার মেয়ে বললেন যে, মা তুমিতো ভর্তায় সরিষার তেল না দিয়ে নারিকেল তেল দিয়েছো।


তখন মা মনির খানের কাছে ভর্তায় তেলের কথা জানতে চাইলে মনির খান খাওয়া চলমান অবস্থায় বললেন যে, হ্যা নারিকেল তেল দিয়েছেন তবুও খেতে পারতেছি, কোন ‌সমস্যা হচ্ছেনা, ( কারন মনির খান সেদিন এতোই ক্ষুধার্ত ছিলেন যে, না খেয়ে কোন উপায় ছিলোনা)। শিল্পী মনির খানের প্রথম এ্যালবাম ” তোমার কোন দোষ নেই’ এর গীতিকার সুরকার মিল্টন খন্দকার ও মনির খানের বক্তব্যে গতকাল মনির খানের শিল্পী জীবনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে জানা গেলো এই রকম অনেক না জানা কথা। শিল্পী হবার বাসনায় পাগল হয়ে মনির খান গীতিকার সুরকার মিল্টন খন্দকারের সাথে পরিচিত হোন রামপুরা টিভি সেন্টারে। তারপর মিল্টন খন্দকার মনির খানকে একদিন তার বাসায় নিয়ে আসেন, এবং এলাকায় মনির খানের জীবনের অনেক নাটকীয় ঘটনা ও তার কন্ঠে গান শুনে অসাধারণ মেলোডিয়াস ভয়েসে মুগ্ধ হয়ে মিল্টন খন্দকার অনুভব করেন যে, ছেলেটাকে সু্যোগ করে দিলে একদিন সে বড় শিল্পী হতে পারবে, আর সেই সুবাদে মনির খানকে শিল্পী হিসেবে আবিস্কার করার কারণে আমার নামেরও ব্যাপক পরিচিতি পাবে। তখন এ্যালবামের কাজ শুরু করার স্বিদ্ধান্ত ফাইনাল হলে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল মনির খান কম টাকা ভাড়ায় টিনসেড মেচ বাসায় থাকতেন, যে বাসায় বৃষ্টিতে অনেক পানি পড়ে ভরে যেত, তখন রুমমেটরা মিলে চকিতে বসে বাটি দিয়ে বালতি ভরে সেই পানি বাইরে ফেলতেন। তখনতো আর মোবাইল ছিলোনা, তাই মনির খানকে শিল্পী বানাতে অনুরোধ করে মনির খানের বাবা ঝিনাইদহ থেকে মিল্টন খন্দকারের কাছে চিঠি পাঠাতো। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কয়েক মাস সময় নিয়ে অবশেষে ১৯৯৫ সালের ২৬ নভেম্বর সারাদেশে রিলিজ হলো মনির খানের প্রথম এ্যালবাম “তোমার কোন দোষ নেই”। তারপর থেকেই তো মনির খান বাংলার সঙ্গীত জগতের একটা ইতিহাস হয়ে গেলেন। অনুষ্ঠানে মনির খানের গানের রানী অঞ্জনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ‌মিল্টন খন্দকার বলেন যে, অঞ্জনা কে, কোথায় থাকে, কিভাবে কি হয়েছে ? তা আমার চেয়ে কোটি কোটি দর্শকেরা আরও বেশি ভালো জানে।। সেই সময়কার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শিল্পী মনির খান গতকাল তার শিল্পী জীবনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অশ্রুসজল হয়ে গেলে, সেখানে উপস্থিত-গানের কারনে এলাকায় মামলা খাওয়া নবাগত শিল্পী আমাদের শিবচরের সোহেলও কল্পনায় ফিরে গিয়েছিলেন শিবচরের সেই দিন গুলিতে, যেই দিনগুলিতে মাহিয়া সোহেলের উপড় ভর করে জীবনের অনেক স্বপ্ন আশায় বিভোর হয়ে, সেই স্বপ্ন আশা পূরণের জন্য অনেক পাগলামি করেছিলো। তখন মাহিয়া’র ইচ্ছায় মাহিয়ার নামে গান করে, মাহিয়ার দেওয়া ছবি দিয়ে গান এডিট করে রিলিজ দেওয়ার পর এলাকার গন্যমাণ্য ব্যাক্তিদের সহ ২ দফা মেম্বার চেয়ারম্যানদের দরবার শালিস পেরিয়ে বিষয়টি পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে বিষয়টি পরবর্তীতে থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। ঘটনাক্রমে দফায় দফায় এলাকায় দারোগা পুলিশের আগমন, দফায় দফায় থানার অফিসার ইনচার্জ স্যার কর্তৃক শিল্পী সোহেল কে থানায় আসার নির্দেশ। অবস্হা ভিন্নরকম বুঝতে পেরে শিল্পী সোহেল বিষয়টি তার একজন ডিসি বন্ধুকে অবহিত করেন। সেই ডিসি বিষয়টি মাদারীপুরের এডিসি জেনারেল কে অবহিত করে শিবচরের অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলতে বলেন। এদিকে সোহেল বিষয়টি তার একজন সহকারী পুলিশ সুপার মামাকেও অবহিত করে রাখেন, মামাও বিশেষ প্রয়োজনে থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলার আশ্বাস দেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মাদারীপুর জজকোর্ট ও ঢাকা জজকোর্ট পর্যন্তও গড়িয়েছে। হাইস্কুলে লেখাপড়া করা অবস্হায় শিল্পী মনির খানের কন্ঠে অঞ্জনার গান শুনেই শিবচরের সোহেল’র মনে ভবিষ্যতে একজন শিল্পী হবার স্বপ্ন জেগেছিলো। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই কলেজে পড়া অবস্থায় সোহেল গান শিখেছিলেন ওস্তাদ অর্জুন কুমার বিশ্বাসের কাছে। মাহিয়ার নামে সোহেলের প্রথম গান রিলিজ হবার পর মাহিয়া সেই গান শুনে তার‌ ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে সোহেলকে টাইটেল দিয়েছিলো বাংলার কুমার শানু।


কিন্তু মনির খানের অঞ্জনার মতো সেই মাহিয়াও যখন পরিস্হিতির স্বিকার হয়ে শিল্পী সোহেলের প্রতিকূলে চলে যায় ঠিক সেদিন থেকেই সর্ব দিকের পরিস্হিতি ঘোলাটে হতে থাকে। সেই সোহেল এখন গীতিকার সুরকার সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও কাজ করে যাচ্ছেন এ্যালবাম ও সিনেমার গানে। শিল্পী মনির খানের মতো শিবচরের সোহেলও আজীবন তার গানের কারনে জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক স্মৃতি মনে করেই সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠিত হতে নিরলশ সাধনা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সোহেলের গানের রানী মাহিয়ার বর্তমান অবস্হান সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল সাংবাদিককে নতুন কোন কিছু বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।


মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest